'রাত ৯টা ছুঁইছুঁই। বারৈয়ারহাট হতে ফোন এলো, এক সন্তান মিনতি করছে মায়ের ঔষধের জন্য। স্থানীয় বাজারে ঔষধটির সংকট তাই অনুরোধ ফেনী থেকে কিনে ফোনের ঠিকানায় পৌঁছে দিতে। অঘোষিত লকডাউনে মহাসড়ক যেন শ্বাপদ সংকুল তবু মায়ের ঔষধ বলে কথা'- কথাগুলো বলছিলেন 'হ্যালো ফেনী'র রূপকার ফেনীর একজন সফল সংগঠক শরীফুল ইসলাম অপু। তিনি বলেন, একজন সন্তানের মুখের হাসি, তার আবেগ দেখার সুযোগ সবার ভাগ্যে জোটে না।

হ্যালো ফেনী কাজ করছে ঘরে ঘরে ঔষধসেবা পৌঁছে দিতে। সেবার পরিধি ফেনী জেলা হলেও কখনো কখনো রাজ্যের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে সীমানার বাইরেও ছুটে যায় হ্যালো ফেনীর বাইক।
অপু বলেন, মানুষকে ঘরে থাকতে বিনামূল্য স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমটি ৩১ মার্চ জন্ম নিয়ে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ১শ ৩৫জনকে সেবা দিয়েছে।

তিনি বলেন, হ্যালো ফেনী হচ্ছে ওয়ান স্টপ সলিউশন প্রতিষ্ঠান তবে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। সময়ের প্রয়োজনে এটি সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কেউ হটলাইনে কল করে অথবা অনলাইন ম্যাসেজ করে ঔষুধের নাম জানালে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে কর্মীরা । এতে শুধুমাত্র ঔষুধের নির্ধারিত দাম সেবা গ্রহীতা থেকে বুঝে নেয়া হচ্ছে । এর জন্য যাতায়াত ভাড়া এবং কোন সার্ভিস চার্জ আমরা নিচ্ছিনা ।

করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। গত মাসের ২৬ তারিখ হতে গণপরিবহনে সরকারের পক্ষ হতে লকডাউন চলছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন প্রায়। নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ঘরে থাকাটাই এখন একমাত্র ঔষধ। তাই সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতে সরকারের পদক্ষেপ দিনদিন কঠোর হচ্ছে।

অসুখ ও ঔষধ মুদ্রার দু'পিঠ। কোভিড-১৯ ছাড়াও মানুষের অসুখ হচ্ছে, ঔষধ লাগছে। প্রতিকূল এ পরিবেশে মানুষের ঔষধসেবা নিশ্চিত করতে হ্যালো ফেনীর পেছনের একটি কারন, বলছিলেন অপু।


অপু বলেন, এ অচলাবস্থা আমাদের রক্ষার জন্য। তবে কিছু প্রয়োজনতো অনিবার্য। খাবার, বাজার এমন অনেক কিছুই। ফেনীতে রাজনৈতিকদলের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরাও খাদ্য সহায়তা নিয়ে মাঠে নেমেছে। তারচেয়েও বড় কথা সরকার বিপুল খাদ্যভান্ডারের কথা জানান দিচ্ছেন। মনে হলো, ঘরে খাবার পৌঁছানোর পরও মানুষ ঘর থেকে বের হবে ঔষধের জন্য। তিনি বলেন, এ চিন্তাটিও কাজ করেছে হ্যালো ফেনী সৃষ্টিতে।

বিদেশ হতেও অনুরোধ আসে ঔষধের সেবা চেয়ে। অপু জানান, কিছুদিন আগে সৌদিআরব থেকে একজন ফোন করে অনুরোধ করেছেন বাবার ইনসুলিন আর সেবা চেয়ে। ফুলগাজীর দুরবর্তী একটি গ্রামে বাবা শেষ দু'বেলা ইনসুলিন নেননি। অপু বলেন, বাবার সুস্থতার জন্য সন্তানের আবেগ তৃতীয় দৃষ্টিতে দেখার সৌভাগ্য সবার হয় না।

অপু জানান, মানুষের অনুরোধের ঔষধের মধ্যে বেশীরভাগ হল ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপজনিত ঔষধ। তিনি জানান, প্রবাসী পরিবারের পক্ষ হতে বেশী অনুরোধ আসছে। ঔষধ ছাড়াও অন্যান্য পণ্যের সহায়তা চেয়ে অনুরোধ আসে। আমরা আপাতত ঔষধের পাশাপাশি শিশুখাদ্যের ফ্রি সেবা দিচ্ছি।

প্রচুর ধন্যবাদ ও দোয়া পাচ্ছেন বলে জানান অপু। সেবাগ্রহীতাদের বেশ কিছু কৃতজ্ঞতা ম্যাসেজ প্রতিবেদককে দেখান হ্যালো ফেনী কর্মীরা।

একজন সেবাগ্রহীতা লিখেছেন, 'আব্বুর এ অষুধটা খুব জরুরী ছিল, আল্লাহ আপনাদের উত্তম বিনিময় দান করুন'।

একজন লিখেছেন, অনেক উপকার হয়েছে ভাইয়া। আপনাদের এ উদ্যোগ এ্যাপ্রিশিয়েবল'।

সেবার জন্য সময় প্রসঙ্গে অপু বলেন, এ কার্যক্রম শুরু করেছি মানুষ যেন ঘরে থাকে, সরকার প্রণীত বিধি মেনে চলে। তিনি বলেন, শুরুতে সকাল ১১টা হতে রাত ১০টা পর্যন্ত এ সেবা থাকলেও চলমান আইন অনুযায়ী তা সন্ধ্যা ৬টাতে সীমিত করা হয়েছে।

হ্যালো ফেনী সেবা প্রদানে একটি হটলাইন চালু করেছে। যে কেউ ০১৯৪৫০০৯৫৯৬ নম্বরে ফোন করে অথবা ম্যাসেজ দিয়ে সেবা নিতে পারবেন।