আউশ মৌসুমে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সরকার গ্রহণ করেছে নানামুখি পদক্ষেপ। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ৩ হাজার কৃষককে ১৫ মেট্রিক টন বীজ ও ৯০ মেট্রিক টন দুই ধরনের সার প্রণোদনা দিয়েছে, মাঠে শুরু হয়েছে বীজতলা তৈরীর কাজ।


জেলা কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান বলেন, এ মৌসুমে ফেনীতে অনেক জমি অনাবাদি রয়ে যায়। এগুলো চাষের আওতায় আনা গেলে জেলার খাদ্যভান্ডার আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। তিনি বলেন, চলমান অচলাবস্থা ভবিষ্যতে যেন খাদ্য ঘাটতির সৃষ্টি না হয় তাই সরকার এ সময়টাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।


জেলা কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, চলমান স্থবিরতায় অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলেও আউশ মৌসুমে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় ভূমিকা রাখবে। এক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জমির মালিকদের চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনী অফিস সূত্র জানায়, এ বছর জেলায় ১১ হাজার ৯শ ৯৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি আবহাওয়া ও পরিবেশ ঠিক থাকে তবে ৩১ হাজার ৩শ ৪৭ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের সুযোগ থাকবে।


সূত্র জানায় ২০১৯ সালে জেলায় মাত্র ৫ হাজার ২শ ৫৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষাবাদ হলেও এ বছর ফেনী সদরে ১ হাজার ৯৫ হেক্টর, ছাগলনাইয়া ২শ ৮০ হেক্টর, ফুলগাজীতে ১শ ৪০ হেক্টর, পরশুরাম ৭৫ হেক্টর, দাগনভূঞা ৫শ ৭২ হেক্টর ও সোনাগাজীতে ৯ হাজার ৮শ ৬৯ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।


একই সূত্রমতে জেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ৬৯ হাজার ৯শ ২৫ হেক্টর। ফেনীতে খাদ্য চাহিদা রয়েছে ২ লক্ষ ৫৩ হাজার ৮শ ৩০ মেট্রিক টন চাল। গত বছর আউশ, আমন ও বোরো মওসুম মিলে সাড়ে ১১ শতাংশ বীজ ও অপচয় বাদ দিয়ে উৎপাদন হয়েছে ৩ লক্ষ ২ হাজার ৮৮ মেট্রিক টন চাল। উদ্বৃত্ত ছিল ৪৮ হাজার ২শ ৫৮ টন চাল। সবচেয়ে বেশী উৎপাদন হয় আমন মৌসুমে। গতবছর আমনে উৎপাদন ছিল ২ লক্ষ ৫ হাজার ৭ শ ২৬ মেট্রিক টন চাল।


সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার জানান, আমন মৌসুমে সদর উপজেলাসহ সর্বত্র প্রায় সব জমিতে আবাদ হয়। আউশ মৌসুমে এ হার তালানিতে ঠেকে। তিনি বলেন, গতবছর মাত্র ৪শ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষাবাদ।


এ মৌসুমে সিংহভাগ আবাদি জমি পতিত থাকার কারন হিসেবে তিনি বলেন, এসময় বৃষ্টির অভাব, দিনমজুরের সংকট, কৃষকের নিজস্ব জমির অভাব, তীব্র গরম হওয়ায় আউশ ধানে কৃষকের আগ্রহ নেই। পাশাপাশি প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায় উদ্যোক্তার অভাব রয়েছে। ফসল ঘরে তোলার সময় হলে অতিবৃষ্টিতে ক্ষতি, অল্প জমিতে চাষাবাদের ফলে পোকামাকড় ও পাখির আক্রমণে ফসলহানি চাষাবাদে অনাগ্রহের অন্যতম কারন।