করোনাকালে দুঃসময়ের মুখোমুখি পরশুরামের গ্রাম পুলিশরা। করোনা সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সকাল হতে রাত পর্যন্ত বিরামহীনভাবে কাজ করে গেলেও তারা পাচ্ছেন না কোন প্রকার প্রণোদনা। এছাড়া অনিয়মিত বেতন ও রেশনের অভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে দুঃসহ দিন পার করছেন গ্রাম প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত পরশুরামের ৩ ইউনিয়নের ৩০ জন সদস্যে। একই চিত্র জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও।


আজ শনিবার (২৫ এপ্রিল) তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা প্রতিবেদকের কাছে তুলে ধরতে গিয়ে মির্জানগর ইউনিয়নের এক গ্রাম পুলিশ সদস্য আনোয়ার বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে মা, বাবা, ছোট ভাই, স্ত্রী ও সন্তানসহ ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাকে। তিনি বলেন, মাসিক ৬৫০০ টাকা করে আমাদের বেতন দেয়া হয়। কিন্তু তা পাই তিনমাস পরপর।


আনোয়ার বলেন, আমার বাবা বয়স্ক মানুষ। তিনি কাজ করতে পারেনা। তিনি বলেন, বেশিরভাগ সময় পরিবারে ঠিকমত খাওয়ার জুটেনা। আবার অনেক সময় মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পরিবার চালাতে হয়। এ করোনা সৃষ্ট দুর্যোগে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম সংকটে পড়েছি আমরা।


আনোয়ারের মত একই দুর্দশা অন্যান্য পরিবাগুলোরও।


উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রতি ইউনিয়নে একজন জন দফাদারের নেতৃত্বে ৯ জন সদস্য গ্রাম পাহারায় নিয়োজিত রয়েছেন।


মির্জানগর ইউনিয়নের দফাদার নুরুল আলম বলেন, গ্রাম পুলিশ দেশের যেকোন দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। যার ব্যতিক্রম এবারও হয়নি। তিনি বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আমরা প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবিরাম কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু সরকারের অন্যান্য পেশায় নিয়োজিতদের মত আমাদের জন্য এখনও কোন বাড়তি প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়নি।


নুরুল আলম বলেন, উপজেলায় লকডাউন করা ৪৭টি বাড়ি দিনরাত পাহারা দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এছাড়াও ইউনিয়নে বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে প্রশাসনের সাথে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছি।


গ্রাম পুলিশের অপর এক সদস্য নুরুন্নবী বলেন, বিভিন্ন সময় আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করে থাকি। আমাদের জন্য যদি সরকার জীবন বীমা পলিসি বাস্তবায়ন করেন, তাহলে ভবিষ্যৎ এর জন্য কিছুটা চিন্তামুক্ত হওয়া যাবে।


বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের দফাদার আব্দুল খালেক তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরে বলেন, আমাদের যদি নিয়মিত রেশন প্রদান করা হয়, তাহলে পরিবার নিয়ে স্বস্তিতে থাকতে পারতাম।


চিথলিয়া ইউনিয়নের দফাদার সামছুল বলেন, দেশের অনেক খাতে বড় বড় জনবলকে সরকার সহযোগিতা করে যাচ্ছে। দেশের মাত্র ৪৭ হাজার গ্রাম পুলিশকে সরকার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে আমরা উপকৃত হতাম। এজন্য উপজেলা এবং জেলার সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতনের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।


বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশ কর্মচারী ইউনিয়নের পরশুরাম উপজেলা সভাপতি বাহার মিয়া বলেন, আমাদের মাসিক বেতনও ঠিকমত জোটেনা। প্রতি তিনমাস পর পর আমরা বেতন পাই। আমি সরকারের কাছে আকুল আবেদন করব যেন প্রতি মাসে আমাদের বেতনগুলো নিয়মিত প্রদান করা হয়।

মির্জানগর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ভুট্টু বলেন, গ্রাম পুলিশদের আমি ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সবসময় সহযোগিতা করে আসছি। তারা ইউনিয়নের যেকোন কাজে সহযোগিতা করে থাকে কিন্তু সঠিক সময়ে তাদের বেতন পায়না। এজন্য অনেক গ্রাম পুলিশ অন্যান্য কাজে জড়িয়ে পড়েন যা ইউনিয়নের কার্যসম্পাদনে বিঘ্ন ঘটায়।


ফেনী জেলা গ্রাম পুলিশ কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, জেলার প্রায় ৩৫০ জন গ্রাম পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের জন্য এখনও কোনধরনের প্রণোদনামূলক বা সহযোগিতা না করায় এ দুর্যোগে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে।


তিনি বলেন, সরকার আমাদের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর মর্যাদা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের জীবনধারণ করা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। শীঘ্রই স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হবে জানান তিনি।


পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছমিন আকতার বলেন, উপজেলা প্রশাসনকে গ্রাম পুলিশ সবসময়ের ন্যায় বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তাদের সহায়তার জন্য শীঘ্রই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলেন জানান ইউএনও। তিনি বলেন, এছাড়াও তারা যদি কোন আবেদন করেন তাও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানাব।