সম্প্রতি চীনের উহান প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) বিশ্ববাসীর কাছে এক আতংকে নাম। বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয় ৮মার্চ। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশের মানুষ যখন ঘরে, শহরের ভাসমান মানুষগুলোর ঠিকানা রাস্তায়। কোন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াই তাদের দিনরাত কাটে। আক্রান্তের ঝুঁকি তাদের বেশি। এদের দরকার খাদ্য এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরঞ্জাম। ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ের চাইতে তাদের কাছে খাবার যোগানোই বড় বিষয়। ভাসমান মানুষদের জীবন ও জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে জনসমাগম বেশি হয় এমন স্থানে তাদের যেতে হচ্ছে। অন্যদিকে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে না পারার সীমাবদ্ধতা ভাসমান মানুষজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আরেকটি কারণ।


দেশের প্রায় সকল মানুষজন এই ভয়ংকর ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে মুখে মাস্ক এবং হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করছে। সেখানে ভাসমানদের মধ্যে হাতে গোনা গুটি কয়েকজনকে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়। আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার তো তাদের কাছে এক ধরনের বিলাসী পণ্য।


বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ বস্তিশুমারি ও ভাসমান লোক গণনার তথ্যমতে, দেশে মোট বস্তির সংখ্যা ১৩হাজার ৯৩৫টি। বস্তিবাসী ও ভাসমান খানা রয়েছে ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৬১টি। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার।


করোনা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য যে ন্যূনতম শিক্ষা প্রয়োজন, তা ভাসমানদের নেই। আবার গণমাধ্যমগুলোয় করোনা ভাইরাসের জন্য সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন দেয়, ভাসমানদের মধ্যে সবাই দেখেন, এমন ও নয়।


এদিকে বিশেষজ্ঞজন বলছেন,ক রোনা ভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে ধনী-দরিদ্র সব শ্রেনির মানুষ সর্তক থাকলেও পথশিশু ও রাস্তায় থাকা ভাসমান লোকজন রয়ে গেছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। অথচ এসব পথশিশু ও ভাসমানরা প্রতিদিন অনেক সুস্থ মানুষের সংস্পর্শে আসে। এতে করে ভাসমান এসব শিশুরা রোগাক্রান্ত হলে তাদের দ্বারা সুস্থ মানুষের ভেতরে সহজে ভাইরাস ছড়িয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। আশস্কাজনক হলেও এটি সত্য ভাসমানদের মধ্যে করোনা উপসর্গ দেখা দিলেও তারা এ ভাইরাস পরীক্ষার জন্য দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানকে অবগত করবেন না।আবার ভাসমানদের নমুনা সংগ্রহ করতে কেউ রাস্তায় ফুটপাতে যাবে না। এই ভাসমান মানুষদের মধ্যে অনেকেই বৃদ্ধ, ভারসাম্যহীন।


দেশে প্রতি দিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে শত শত। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ভাসমানদের নমুনা সংগ্রহে কোনো যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বিষয়টা আমলে নিবে বলে আশা রাখছি।


লেখিকাঃ
এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী
মহিপাল সরকারি কলেজ