কবি নজরুল ইসলাম তাঁর “সিন্ধু হিন্দোল” কাব্যগ্রন্থটি হাবীবুল্লাহ বাহার ও তাঁর বোন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শামসুন্নাহার মাহমুদকে উৎসর্গ করেছিলেন।


ডেঙ্গু জ্বর যাকে ব্রেক বোন জ্বর বলা হয়ে থাকে, এই জ্বর এক প্রজাতির মশার কামড়ের কারণে হয় যার নাম “এডিস মশা” - যে এই রোগের ভাইরাস বহন করে।


আর ডেঙ্গু সারা দেশে এক আতঙ্কের নাম। কারণ ঐ মৌসুমে প্রতিদিনই ডেঙ্গুজ্বরে কেউ না কেউ মারা যায় ।


ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে হলে সবার আগে যে বিষয়টি প্রয়োজন তা হল সচেতন হওয়া। এ ছাড়া আপনার ঘরবাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।


এডিস মশা স্বচ্ছ-পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে। এ ছাড়া মশক নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে নিজ থেকে, কমিউনিটি থেকে এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে ।


বলা বাহুল্য যে মশা'র জন্য ঐতিহাসিকভাবে বিখ্যাত আমাদের ঢাকা শহর। শুধু তাই নয়, মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে মুঘলরা বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত করেছিল।


পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলেন হাবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী। তিনি কিভাবে এই কঠিন সমস্যা সম্পূর্ণভাবে সমাধান করেছিলেন তা বর্ণনা করা হলো সংক্ষিপ্ত আকারে সবার জন্য।


মন্ত্রী হবার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০০০০ মশার ঔষধ ছিটানোর মেশিন আনিয়েছিলেন। রাস্তার পাশে গভীর ড্রেন খনন করিয়েছিলেন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিক করলেন তিনি সুষ্ঠুভাবে। শহরের সবগুলি পুকুর ডোবা নালা খাল পরিষ্কার করলেন সঠিকভাবে। বিশিষ্ট শিল্পপতি ইস্পাহানীর সহায়তায় মশার ওষুধ ছিটানোর উপযোগী দুইটি বিমান কিনেছিলেন তিনি নিজ উদ্যোগে। পঞ্চাশ দশকে মাত্র দুই বছরে ঢাকার মশা এমনভাবে নির্মূল করেছিলেন যে, তাঁর মৃত্যুর দশ বছর পরও মানুষ মশারী না টানিয়ে ঘুমাতে পারতো আরাম করে।


বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু তাঁর মতো একজন হাবীবুল্লাহ বাহার এখনও জন্ম হয় নাই যে স্মরণ করবে সবাই প্রশংসা এবং শ্রদ্ধার সাথে।


ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র শান্তিনগরে অবস্থিত হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটি তাঁর নামানুসারেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।


আমরা কি উনার মতো হতে পারি না? প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব, সময়পুযোগী পদক্ষেপ, সততা, দায়িত্ববোধ, স্বদিচ্ছা, নিঃস্বার্থতা, স্বতঃস্ফূর্ততা, সর্বোপরি জনগণকে ভালবাসা মনপ্রান দিয়ে ।


উল্লেখ্য যে ছাত্রাবস্থায় তিনি চট্টগ্রাম কলেজের ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের "বি" দলে ফুটবলার হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি এই দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন। ১৯৩১ সালে তার নেতৃত্বে কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব "এ" দলে উন্নীত হয়। ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। ফেডারেশন প্রতিষ্ঠায় তার ছিল অগ্রণী ভূমিকা।

এ দেশের নারী মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী, বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ এবং সমাজসেবিকা শামসুন্নাহার মাহমুদ ছিলেন হাবীবুল্লাহ বাহারের বোন। হাবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরীর সাথে আনোয়ারা বাহার চৌধুরীর বিয়ে হয়। আনোয়ারা বাহার চৌধুরী বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ছিলেন। ১৯৬৯ সালে তিনি স্বামীর নামে শান্তিনগরে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ স্থাপন করেন। উনাদের ছেলে ইকবাল বাহার চৌধুরী ভয়েস অব আমেরিকার একজন বিশিষ্ট সংবাদ পাঠক ছিলেন।


বলাবাহুল্য যে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। চট্টগ্রাম সফরের সময় কাজী নজরুল ইসলাম তার বাড়িতে অবস্থান করতেন। কবি তাঁর “সিন্ধু হিন্দোল” কাব্যগ্রন্থটি হাবীবুল্লাহ ও তার বোন শামসুন্নাহারকে উৎসর্গ করেছিলেন।

তাছাড়া ১৯৪৬ সালে তিনি ফেনীর পরশুরাম থেকে বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য হন। ১৯৪৭ সালের নোয়াখালী দাঙ্গার সময় মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নোয়াখালী সফরে তিনি তার সফরসঙ্গী ছিলেন।


([বিঃ দ্রঃ-পরশুরামের গুথুমা চৌধুরী বাড়ীর এই ক্ষনজন্মা পুরুষের পরবর্তী প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসাবে অগ্রজপ্রতিম আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ভাইও ফেনী জেলায় বিভিন্ন জনকল্যামূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন। )


লেখকঃ
অধ্যাপক
রেস্পেরেটরী মেডিসিন বিভাগ, ব্রাহ্মনবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও
সভাপতি
বিএমএ, ফেনী জেলা।

কার্টেসীঃ এম.কে জাকারিয়া