তারা ৪ জন সেবিকা। প্রতিদিনের মত উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পপ্লেক্সে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আজ দায়িত্বরত অবস্থায় অবস্থান তারা জানলেন তাদের ভর্তি হতে হবে করোনা রোগী কাতারে। যেতে হবে আইসোশেলনে। আজ শনিবার (১৬ মে) রাতে তারা জানলেন তারা নিজেরাই পজিটিভ। তখনও তারা ডিউটিরত অবস্থায় ছিলেন।


ঘটনাটি পরশুরামের ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পপ্লেক্সের। আজ শনিবার রাতে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে পরীক্ষায় ওই ৪জন সেবিকার পজিটিভ এসেছে। 


উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডাঃ ইন্দ্রজিৎ ঘোষ কনক বলেন, গত ১১ মে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের তেমন কোন উপসর্গ না থাকায় তার আজ সন্ধ্যায়ও দায়িত্বরত অবস্থায় ছিলেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল খালেক মামুন বলেন, বর্তমানে তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো। তাদের হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেয়া হবে। আগামীকাল তাদের ২য় দফায় নমুনা সংগ্রহ করে তা নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।


স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হওয়া হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম ব্যহত হবে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, পরিস্থিতিতে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চালু রাখা হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে অল্প সংখ্যক ভর্তি রোগী আছে। তাদের আলাদাভাবে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চিকিৎসা দিয়ে যাব আমরা।

এতদিন ধরে পরশুরাম উপজেলা করোনামুক্ত থাকলেও এই প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলার জনমনে বিরাজ করছে আতংক আর উৎকণ্ঠা। 

সেই শংকার কথা জানিয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ইয়াছিন শরীফ মজুমদার বলেন, গত ১১ মে থেকে যারা হাসপাতালে এসেছে সবাই হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা জরুরি। পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসকসহ দায়িত্বরত সকলকে নুমনা পরীক্ষা করা দরকার।

যুবলীগ সভাপতি বলেন, পরশুরাম বাজার বণিক সমিতি একদিন পর পর কাপড়ের দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তা বাতিল করে দ্রুত বন্ধ করা হলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক কমবে।


পরিসংখ্যান বলছে, ফেনী এ পর্যন্ত শনাক্তের এক তৃতীয়াংশই স্বাস্থ্যকর্মী। তারাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।


স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকি প্রসঙ্গে বিএমএ ফেনী জেলা সভাপতি ডাঃ সাহেদুল ইসলাম কাওসার বলেন, সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকরা সরাসরি রোগীর সংস্পর্শে আসতে হচ্ছে- এর কোন বিকল্প নেই। ইতোমধ্যেই সামাজিক সংক্রমণ হয়ে গিয়েছে। কে আক্রান্ত -কে আক্রান্ত নয় বুঝা মুশকিল। অনেক রোগীই ভয়ে/ সামাজিক হয়রানী থেকে বাঁচতে চিকিৎসকের কাছে ইতিহাস গোপন করেন। এর মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর পর্যাপ্ততা ও গুনগত মানের একটি চ্যালেঞ্জ তো আছেই। সব মিলিয়ে চিকিৎসক -স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশী থেকেই যাচ্ছে এবং যথারীতি আক্রান্ত হচ্ছেন।