ফেনীতে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যান চলাচল ও দোকানপাট খোলা রাখার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করেছে জেলা প্রশাসন।

আজ রবিবার (১৭ মে) জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন ও চলমান পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল সোমবার হতে ফেনী শহরসহ উপজেলা সমূহে ঔষধের দোকান ছাড়া সকল কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। একই সাথে জরুরী সেবাসমূহ ছাড়া সকল প্রকার যানচলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।

ঈদের ছুটিতে অন্য জেলা হতে ফেনীতে আসতে নিরুৎসাহিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সাংসদ সকল জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা প্রদান করেন। পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি। এছাড়াও শহরের সিএনজি ও রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান বলেন, ঔষধের দোকানছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান সীমিত আকারে খোলা থাকবে। তবে কাঁচাবাজার বন্ধ থাকলেও ভ্যান গাড়িতে করে তা বিক্রি করা যাবে বলে জানান তিনি। জেলা প্রশাসক বলেন, কাঁচাবাজারে অনেক জনসমাগম ঘটে এতে করে আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।

গৃহীত সিদ্ধান্ত সকলে মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন সুলতানা জানান, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জনগণকে সচেতন ও সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন নিরলস কাজ করছে।

ইউএনও বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকার সকল প্রকার দোকানপাট ও যানচলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছিল। কিছুদিন পূর্বে মানুষের নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে নিরাপত্তা বিধান মেনে সীমিত আকারে ব্যবসা ও দোকানপাট খোলার অনুমতি দিয়েছিলো সরকার। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ সরকারি নির্দেশনা না মেনে দোকানপাট খোলা রাখছেন এবং আইন অমান্য করে রাস্তায় যানবাহনও চলাচল করছে। ফলে মানুষের অসচেতন অবাধ চলাচলের কারণে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে ফেনীতে রেকর্ড সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।

নাসরীন সুলতানা বলেন, নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা পর হতে বিকাল থেকে পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরে মাইকিং করা হচ্ছে। ফেনী পৌরসভার প্যানেল মেয়র আশ্রাফুল আলম গীটার জানান, কাঁচাবাজার বন্ধ থাকলেও পাড়া মহল্লায় দোকান সীমিত আকারে খোলা থাকতে পারে।

তবে এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ফেনীর সুলতান মাহমুদ পৌর হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক জানান, এমনিতে ব্যবসায়ীদের দূর্দিন যাচ্ছে। কাঁচাবাজার বন্ধ করে দিলে তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। তিনি বলেন, বাজারের বিভিন্ন পচনশীল দ্রব্য মাছ, শাক সবজি নষ্ট হবে।

এ ঘোষণার পর থেকেই বাজারে ভিড় বেড়ে গেছে। বিকাল হতেই সাধারণ মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বাজার করতে।

একই আদেশ ফেনীর অন্যান্য উপজেলাগুলোতে জারি করা হয়েছে। ফলে কার্যত ফেনী অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে।

দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল হাসান বলেন, দাগনভূঞায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় চলাচল সীমিতকরণের স্বার্থে অভ্যন্তরীণ রিকশা, সিএনজি-টমটম জাতীয় লোকাল যান পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, আমরা অনেকদিন কষ্ট করেছি, আর মাত্র অল্প কিছুদিন কষ্ট করি। সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি এবং ঘরে থাকি। তাহলে আমাদের খুব শীঘ্রই মুক্তি মিলবে। সাধারণ মানুষ এই সহযোগিতাটুকু না করলে আমরা ফেনীবাসী যেভাবে দ্রুত আক্রান্ত হচ্ছি, তাতে আমাদের সামনে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

তবে ঘোষণার পর থেকে এ নিয়ে সাধারণ মানুষদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কেউ এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন, আবার কেউ এর বিপক্ষে মতামত দিচ্ছেন। তাদের মতে, ফেনীতে করোনা শনাক্ত করার পর থেকে এমন কড়াকড়ি আরোপ করলে হয়ত এতজন আক্রান্ত হতনা।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গতকাল শনিবার জেলা একদিনে সর্বোচ্চ ৩১জনের দেহে করোনা সংক্রমণ মিলেছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ৬১জন শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু, যুবক, বৃদ্ধ, নারী, পুরুষ, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাসহ সব বয়সী মানুষ রয়েছেন।