ফেনীতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আড়াইশ ছুঁই ছুঁই করছে। আজ শনিবার (৬ জুন) ২৩ জনসহ গত ৮দিনে মোট ১৫৪জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। আর এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৪৮জনে। আজ শনিবার (৬ জুন) সকালে এ তথ্য জানান জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন।


তিনি জানান, শনিবার নতুন শনাক্তকৃতদের মধ্যে ফেনী সদরে ১০ জন, সোনাগাজীতে ৭জন, ছাগলনাইয়ায় ৩জন ও পরশুরামে ২জন রয়েছে।


সূত্র জানায়, ফেনী সদরে নতুন শনাক্তকৃত ১০ জনের মধ্যে ৫জনই এক পরিবারের। অপরদিকে সোনাগাজীতে এক ব্যাংকার সহ আরও ৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পরশুরামে নতুন আক্রান্তদের মধ্যে একজন মিডওয়াইফ রয়েছেন। ফুলগাজীর আনন্দপুরে নতুন করে আরও ১জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। ছাগলনাইয়া নতুন শনাক্তকৃতদের মধ্যে দুইজন পুর্ব পাঠানগড় ও একজন পৌরসভার পশ্চিম ছাগলনাইয়া এলাকার বাসিন্দা।


পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল খালেক মামুন জানান, আক্রান্তদের একজন মির্জানগর ইউনিয়নের সুবার বাজার উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবিকা (মিডিওয়াইফ)। অপরজন চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঈদে বাড়িতে এসেছিলেন। গত ৩০ মে ও ১ জুন তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিলো। তাদের বয়স ৩০-৫৫ বছরের মধ্যে।


উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রেখে লকডাউন করা হয়েছে বলেও জানান ডাঃ মামুন ও স্থানীয় চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ভুট্টু।


ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এবিএম মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন, নতুন শনাক্তকৃত ব্যক্তির বয়স ৫৫ বছর। তিনি উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের উত্তর আনন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। গত ২ জুন ওই ব্যক্তি জ্বর শর্দি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। ৬ জুন শনিবার সকালে তাঁর করোনা পজিটিভ আসে।


সূত্র জানায়, ফেনীতে আক্রান্তদের মাঝে রয়েছেন শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধসহ স্বাস্থ্যকর্মী, সরকারী কর্মকর্তা, ট্রাফিক পুলিশ, ব্যাংক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, শিক্ষকসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।


ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, এ পর্যন্ত জেলায় মোট শনাক্তকৃত রোগীদের মধ্যে সদরে সর্বোচ্চ সংখ্যক রয়েছে ৯২জন। শনাক্তকৃত সংখ্যার ভিত্তিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দাগনভুঞা উপজেলায়। এ উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট ৭৬জন শনাক্ত হয়েছে। এরপরে রয়েছে সোনাগাজীতে ২৯জন, ছাগলনাইয়ায় ২৭জন, পরশুরামে ৯জন, ফুলগাজীতে ৯জন। এছাড়া আরও ৫জন রয়েছেন ফেনী জেলার বাইরের বাসিন্দা, ফেনীতে তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।


জেলা করোনা নিয়ন্ত্রণকক্ষের সমন্বয়ক ডা. শরফুদ্দিন মাহমুদ জানান, আক্রান্তদের মধ্যে ৬৪ জন সুস্থ হয়েছেন। এদের মধ্যে সদরে ২৫ জন, সোনাগাজীতে ৮ জন, ছাগলনাইয়ায় ১৩ জন, দাগনভূঞায় ১০ জন, পরশুরামে ৭ জন ও ফুলগাজীতে ৪ জন সুস্থ হয়েছেন। আর জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪জন।


সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ফেনীতে মোট ২ হাজার ১শ ৯৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে ১ হাজার ৮শ ৬২টি নমুনার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে।


এর আগে গত ১৬ এপ্রিল জেলার ছাগলাইনাইয়া উপজেলায় এক যুবকের শরীরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। মাঝখানে আক্রান্তের হার সীমিত থাকলেও মে তে এসে তা লাফিয়ে লাফিয়ে ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে। এর আগে ১৬ এপ্রিল হতে ৯ মে পর্যন্ত ফেনীতে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা সীমাবদ্ধ ছিল ৭ জনে।

স্বাস্থ্য বিভাগ প্রদত্ত তথ্যমতে, ফেনীতে ২৯ মে শুক্রবার ফেনীতে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। আর শুক্রবার (৫ জুন) একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩২জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।