নাগরিক সভ্যতার পরিবর্তনের কারণে শহুরে জীবন থেকে ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। এর প্রভাব পড়ছে যেমন প্রকৃতিতে, তেমনি মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রায়ও এর বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবু সবুজে ভরা গ্রাম বাংলায় বেড়ে উঠা নাগরিক সমাজের একটা অংশ সবুজকে ধরে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিজের আবাস্থলে। সময়ের সাথে এ বাগান এখন আর শৌখিনতায় আটকে নেই। নিরাপদ সবজি দিয়ে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদাপূরণ, পারিবারিক বিনোদন এবং অবসর কাটানোর অন্যতম উপায় হতে পারে ছাদ বাগানগুলো।

শৌখিন মানুষরা তাদের ঘরবাড়িতে সবুজকে ধরে রাখার জন্য একান্ত নিজস্ব ভাবনা আর প্রচেষ্টায় আপন আপন বাড়ির ছাদে তৈরি করছেন ছাদ বাগান। তেমনই একজন বৃক্ষপ্রেমী তাহিয়া শারমিন। প্রকৃতির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তার বাড়ির ছাদকে সবুজ উদ্যানে রূপ দিয়েছেন একটু একটু করে।
শারমিন আক্তার ফেনী পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড বনানী পাড়া এলাকায় নিজেদের ছয় তলা ভবনের পুরো ছাদ জুড়ে ছাদ বাগান গড়ে তুলেছেন।

ফেনী সরকারি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী তাহিয়া শারমিনের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় এক যুগ ধরে তিনি ছাদ বাগানের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। ৮ম শ্রেণি পড়াকালীন সময় থেকে গাছপালার প্রতি মায়া জন্মে তার। শুরুর দিকে নিজের হাত খরচের টাকা জমিয়ে বাসার ছাদে ফল-ফুলের চারা লাগানো শুরু করেন। পরবর্তীতে পরিবারের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে তার বাগান এখন পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফল, ফুল, ঔষধী ও বনজ বৃক্ষের র ছোট-বড় প্রায় চারশ গাছ ও গাছের চারা আছে।

প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমি ছাদ বাগানে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন তাহিয়া শারমিন। তিনি বলেন, প্রকৃতি থেকে আমরা যে পরিমাণে অক্সিজেন ও বেঁচে থাকার বিভিন্ন উপাদান গ্রহণ করি সেই তুলনায় প্রকৃতির যত্ম নেইনা। ফলে দিন দিন আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পড়ছে। অথচ বাড়ির ছাদে যদি ছোট্ট একটা বাগান থাকে তাহলে বাড়ির সদস্যরা অবসর সময়ে নির্মল বাতাস গ্রহণ করতে পারে। সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপনে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ফেনী বৃক্ষপ্রেমী নামে একটা ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে আমরা বৃক্ষপ্রেমীরা নিজেদের বাগানের বিভিন্ন সমস্যা ও পরিচর্যা বিষয়ে আলাপ করে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। মাঝে মাঝে একে অন্যকে নিজের বাগানের গাছের চারা ও বীজ উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করি। আমি আমার ছাদ বাগান থেকে অনেকজনকে চারা ও বীজ দিয়েছি। ছাদ বাগান বিষয়ে কৃষি অফিস বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে যদি পরামর্শ ও সহযোগিতা পাওয়া যায় অনেকেই ছাদ বাগানে উদ্বুদ্ধ হবে বলে মনে করেন তিনি।

বাগান ঘুরে দেখা যায়, ছাদ বাগানের এক অংশে বিভিন্ন প্রজাতির চাল কুমড়ো, শসিন্দা, ঢেঁড়স, লাল শাক, পাট শাক, ডাঁটা শাক, করলা, বেগুণ, টমেটো, পেঁপে, কাঁচা মরিচ, ধনিয়াসহ বিভিন্ন মৌসুমি সবজি চাষ করা হয়েছে। বিষমুক্ত এসব সবজি পরিবারের চাহিদা পূরণ করা ছাড়াও আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের মাঝে বিলি করেন তাহিয়া শারমিন।

ফেনী পৌরসভা কৃষি উপ সহকারী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, ছাদ বাগানের জন্য আমাদের কোন প্রকল্প বা প্রনোদনা নেই। সাধারণত বিভাগীয় শহরগুলোতে ছাদ বাগানের বিভিন্ন প্রকল্প থাকে। তারপরও যারা ছাদ বাগান করেছেন বা করতে চান তাদেরকে আমরা বিভিন্ন পরামর্শ ও ছাদ বাগান সাজানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে থাকি। ফেনী পৌরসভাধীন যে কোন নাগরিক আমাদের কাছে পরামর্শ চাইলে আমরা শতভাগ পরামর্শ ও সহোযোগিতা করে থাকি।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, পরিপূর্ণ ছাদ বাগানের সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে শুধুমাত্র ঢালাওভাবে অনেকগুলো গাছের চারা লাগালেই সেটিকে পরিপূর্ণ ছাদ বাগান বলা যায় না। অনেকগুলো নিয়মনীতি অনুসরণ করে ছাদ বাগান সাজাতে হয়। ছাদ বাগানে আগ্রহীরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে তাদের আমরা এ ব্যাপারে সহযোগিতা করে থাকি।

কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ছাদ বাগানে গাছের ফলন ও পরিচর্যা করা খুব কঠিন। পর্যাপ্ত মাটি ও পানির অভাবে গাছের চারা বা ফল-ফুলে বিভিন্ন ধরনের রোগ ও পোকার আক্রমণ দেখা যায়। অনেক সময় ছাদ বাগানী জানেন না কি ধরনের পদ্ধতি বা ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা তাদের সঠিক পরামর্শ ও পরিচর্যা ব্যাপারে সহযোগিতা করবো।