ফেনীর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বিদায় নিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রবীণ আইনজীবী মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আকরামুজ্জমান। আজ সোমবার ( ২৯ জুন) বাদ আসর ফেনী সদরের মোটবী ইউনিয়নের বেদরাবাদ শিলুয়া গ্রামের পাটোয়ারি বাড়িতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে সমাহিত করা হয়েছে।

জানাযা পূর্বে মরহুমের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন ফেনী-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকম, পিপি হাফেজ আহম্মদ, মোটবী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ। জেলা প্রশাসনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম জাকারিয়া। এসময় মরহুমের ছোট ছেলে সিনিয়র সহকারি জজ সাইদুজ্জামান শরীফ তার রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনায় সকলের দোয়া কামনা করেন। এসময় তার বড় ছেলে ব্যাংকার সাইফুজ্জামান বাবু উপস্থিত ছিলেন।

বক্তব্যে নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, এ্যাডভোকেট আকরামুজ্জমান একজন সফল রাজনীতিবিদ নয়, একজন সফল পিতাও ছিলেন।

জানাযার আগে জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পুলিশের একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদর্শন করে। এসময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। জাতীয় পতাকায় মোড়ানো ছিল তার মরদেহ।

জানাযায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজ আহম্মদ চৌধুরীসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও বিএনপি নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। এছাড়া আইনজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ তার জানাযায় অংশ নেন। সরকারি নির্দেশনা মোতাবকে সংক্ষিপ্ত পরিসরে তার দাফন সম্পন্ন হয়। ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন সুলতানা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সোমবার বিকাল ৩টার দিকে তার লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স ফেনী এসে পৌঁছালে তার মরদেহ ট্রাংক রোডের উকিল নুরুজ্জামান সড়কের নিজ বাসভবনে নেয়া হয়।

ফেনীর জেষ্ঠ্য আইনজীবি ও মুক্তিযোদ্ধা আকরামুজ্জামান (৭৫) রবিবার ভোরে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। (ইন্নানিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন।) করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ৯ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়েসহ বহু স্বজন রেখে যান। তিনি ছিলেন বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রখ্যাত আইনজীবি নুরুজ্জামান উকিলের কনিষ্ঠ সন্তান।

ফেনীর প্রবীণ রাজনীতিক আকরামুজ্জামান ১৯৬৭ সালে মহকুমা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। মুক্ত স্বদেশে ফিরে ন্যাপ (মোজাফফর ) এর সাথে যুক্ত হন। পরে আশির দশকে যোগ দেন আওয়ামীলীগে। তিনি ’৮৪ তে জেলা আন্দোলনের সাথেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। বহু বছর জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি থাকার পর গত বছর জেলা সম্মেলনে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এর বাইরে তিনি ফেনী ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব এর ফেনী শাখার সভাপতি ছিলেন। তিনি জেলা আইনজীবি সমিতিরও বার বার নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন এবং রোটারী ক্লাব অব ফেনীর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ফেনী জজ আদালতে পিপি (সরকারী কৌসূলী) র দায়িত্বও পালন করেন।