ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত ফি ও বকেয়া বেতন আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় শিক্ষা কমকর্তা বলেছেন ১শ টাকার বেশি ফি নেয়া যাবে না, তবে নেয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪১০ টাকা।

আজ শনিবার (২২ আগস্ট) থেকে সোনাগাজী উপজেলার ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা ফি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পযন্ত ৩৬০ টাকা এবং নবম ও দশম শ্রেণিতে ৪১০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ ফি নির্ধারণ করেছে উপজেলা শিক্ষক সমিতি। আবার কোন কোন স্কুলে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে এর চেয়ে কমেও ফি আদায় করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক জানান, বর্তমান করোনাকালীন সময়ে পরীক্ষার ফি ও বকেয়া বেতন বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক অভিভাবকের একাধিক সন্তান একই বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে।

অভিভাবকরা জানান, জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে শুধুমাত্র সোনাগাজীতেই বকেয়া বেতন আদায় করতে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে । সোনাগাজীতে ২৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১০ হাজার ছাত্রছাত্রী রয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষার নামে লাখ লাখ টাকা আদায় হচ্ছে।

সোনাগাজী উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও আহম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মাঈন উদ্দিন জানান, চট্টগ্রামের ডিজি, জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে আলোচনা করে এ পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ ৫ মাস ধরে পড়ালেখা থেকে দূরে সরে গেছে। তাদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে মূল্যায়ন পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। এখানে পরীক্ষার ফির জন্য কাউকে বাধ্য করা হচ্ছে না।

মঙ্গলকান্দি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, পরীক্ষার ফির সাথে আগষ্ট মাস পর্যন্ত বেতন দিতে হবে। পরীক্ষার ফি কোন শ্রেণীতে কত তিনি জানেন না। তিনি বলেন, পরীক্ষার ফি শিক্ষকেরা জানেন।

মোয়াজ্জেম হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম জানান, পরীক্ষার ফি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৩৬০টাকা নবম শ্রেণির থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৪১০ টাকা।

অর্ধ-বার্ষিকীর সিলেবাস অনুসরণ করে সোনাগাজীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষা গ্রহণ করছে শিক্ষকেরা। এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে প্রশ্নপত্র ও খাতা শিক্ষার্থীদেরকে বিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করার জন্য ফোন করা হয়। সকল শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষা ফি ও মার্চ থেকে আগষ্ট মাসের বেতন জমা দিয়ে বিদ্যালয় অফিস কক্ষ থেকে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, চলতি মাসের দ্বিতীয় সাপ্তাহে সোনাগাজী সরকারী সাবের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, আল হেলাল একাডেমী, চর সাহাভিকারী উচ্চ বিদ্যালয় ও সোনাগাজী মডেল দাখিল মাদ্রাসায় পরীক্ষা গ্রহণ করে বকেয়া বেতন আদায় করেছে। অভিযোগ রয়েছে পরীক্ষা ফি'র সাথে বকেয়া বেতন হিসেবে আল হেলাল একাডেমি ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেছে।

সোনাগাজী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ নুরুল আমিন জানান, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি ফি না নিয়ে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। বকেয়া বেতনের জন্য কোন অভিভাবককে ফোন করে চাপ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে পরীক্ষার ফি আদায়ের সুযোগ নেই।

জেলা শিক্ষা অফিসার কাজী সলিম উল্যাহ বলেন, শিক্ষকেরা চট্টগ্রামে ডিজির সাথে যোগাযোগ করেছে। তিনি ১শ টাকার বেশি ফি নেয়া যাবে না বলেছেন। বেশি নিলে খতিয়ে দেখা হবে। পরীক্ষার খাতা ও প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীর বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হবে। তারা স্কুলে আসবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত দেব জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।