প্রায় ছয় দশক ধরে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ফেনীর সর্বজনবিদিত বর্ষীয়ান নেতা আজিজ আহম্মদ চৌধুরী। রাজনৈতিক কর্ম-ব্যপ্তিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে সততা ও জবাবদিহিতাকে পুঁজি করে প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে সবসময় সচেষ্ট ছিলেন আজিজ আহম্মদ চৌধুরী। একজন স্বচ্ছ রাজনীতিক হিসেবে তিনি যেমন ফেনীর আপামর মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। তেমনি জেলার উন্নয়নে নিবেদিতভাবে কাজ করে গেছেন ইতিহাসের এ প্রত্যক্ষদর্শী। পেয়েছেন সর্বদলে ক্লীন ইমেজ খ্যাতি।

আনন্দপুর চৌধুরী বাড়িতে বাবা সুলতান আহম্মদ চৌধুরী ও মা আজিজের নেছা চৌধুরীর ঘরে ১৯৩৯ সালের ২ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আমৃত্যু ফেনী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। আজিজ আহম্মদ চৌধুরী শিক্ষকতা পেশা দিয়ে জীবন শুরু করলেও পরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৫ বছর তিনি একটানা আনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। তার কৃতিত্বের স্বরূপ ১৯৯৪ সালে শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে স্বর্ণপদক লাভ করেন।

আজিজ আহম্মদ চৌধুরী রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্যময়। ১৯৬৪ সালে আনন্দপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে ছাগলনাইয়া থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত জেলা আওয়ামীলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

এরপর তৎকালীন সভাপতি আবুল কাশেম মারা গেলে তাকে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। ২০১২ সালের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন শেষে তাকে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। এছাড়া জীবদ্দশায় ফেনী জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

আজিজ আহম্মদ চৌধুরী দ্বিতীয় মেয়াদে ফেনী জেলা পরিষদের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ছিলেন শহীদ পরিবারের সন্তান। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তার দাাদা আলহাজ্ব হোসেন উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীসহ পরিবারের ৭ সদস্যকে একসাথে হত্যা করেছিল পাক হানাদার বাহিনী। তার দাদার স্মৃতিতে ফেনীতে শহীদ হোসনে উদ্দিন বিপনী বিতান প্রতিষ্ঠা করা হয়।

শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সমাজ সেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে গেছেন আজিজ আহমেদ চৌধুরী।

নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত শাহ আলম চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের আমৃত্যু সভাপতি তিনি। এছাড়া ফেনী ডায়াবেটিক সমিতি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রোগী কল্যাণ সমিতি, প্রবীণ হিতোষী সংঘ সহ একাধিক সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। বাবা সুলতান আহম্মদ চৌধুরীর নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছেন ‘সুলতান এন্ড সন্স’।

আজ সোমবার দিবাগত রাত ২টা ২০ মিনিটের দিকে ৮১ বছর বয়সে ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালে মৃত্যুবরণ আজিজ আহমেদ চৌধুরী। মৃত্যুকালে তিনি ২ ছেলে ও ২ মেয়েসহ আত্মীয় স্বজন, অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখেন গেছেন। তার বড় ছেলে ব্যবসায়ী ও ছোট ছেলে চৌধুরী আহমেদ রিয়াদ আজিজ রাজীব জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তার মৃত্যুতে ফেনীর সর্বমহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।