প্রায় সাড়ে তিনবছর আগের ছেলে-মেয়েকে রেখে একদিন মানসিক ভারসাম্যহীন মা হারিয়ে যান। এখানে, ওখানে নানা জায়গায় পাগলের মত খোঁজাখুঁজি করেও কোন সন্ধান পায়নি তার সন্তানরা। মাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল তারা।

অবশেষে প্রায় তিন বছর পরে ফেনীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সহায়’ এর মাধ্যমে মানসিক ভারসাম্যহীন মা রোকেয়া বেগমকে (৫০) খুঁজে পেল তার একমাত্র ছেলে রিয়াজ।

দীর্ঘদিন পর মাকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে ছেলে রিয়াজ। তিনি বলেন, ২১০৭ সালের এপ্রিল মাসের দিকে বোনের বাসা হতে নিখোঁজ হয়ে যান তার মানসিক ভারসাম্যহীন মা।
‘মাকে হারিয়ে পাগলের মতো খুঁজেছি। সব সময় আল্লাহর কাছে বলেছি মাকে যেনো খুঁজে পাই। মনে বিশ্বাস ছিলো একদিন মাকে খুঁজে পাবো। আজ মাকে পেয়েছি। ’

রিয়াজ বলেন, মাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। গত রবিবার ফেসবুকে একটি পোস্ট দেখে তার সন্ধান পাই। পরে সহায়’র সাথে যোগাযোগ করে তাকে নিতে গতকাল ফেনী ছুটে আসি।

রোকেয়া বেগম কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার জঙ্গলবাড়ি ইউনিয়নের বড় চর গ্রামের মোহাম্মদ রতন মিয়ার স্ত্রী। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

সহায় এর সভাপতি মনজিলা মিমি জানান, গত ১৩ জুলাই দাগনভূঞার জায়লস্কর হতে পথচারীরা গুরুতর আহতাবস্থায় রোকেয়া বেগমকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেই থেকে তিনি হাসপাতালের ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী ও সহায় এর তত্বাবধানে হাসপাতালের ২য় তলায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু মানসিক ভারসাম্য হওয়ায় তিনি তার ঠিকানা বলতে পারছিলেন না। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তার আত্মীয় স্বজনের সন্ধান চেয়ে একটি পোস্ট করি। তা দেখে তার ছেলে মাকে সনাক্ত করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। সোমবার তিনি ফেনী এলে আমরা তাকে তার কাছে তুলে দেই।

সোমবার বিকালে মাকে নিতে এসে আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে পড়ে তার ছেলের চোখে। হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনরা এমন দৃশ্য দেখে তারাও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। রিয়াজ বলেন, আমি সহায়ের নিকট চিরকৃতজ্ঞ। এসময় চিকৎসক ও নার্সসহ সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, আপনাদের সহযোগিতা না পেলে আমার মা বিনা চিকিৎসায় মারা যেতো।

এসময় উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া ও সহায়ের কার্যকরী সদস্য কার্যকরী সদস্য মামুনুর রশিদ মিয়াজি।

সহায়’র সাধারণ সম্পাদক দুলাল তালুকদার জানান, মা ছাড়া সন্তান কত অসহায়, যে হারিয়েছে সেই বলতে পারবে। সেই মাকে তার সন্তানের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। মানবতার পাশে সহায় সবসময় ছিল, থাকবে।