৩ মাসের শিশু জুনাঈদকে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতাতে চেয়েছিল অপহরণকারীনি রোকসানা আক্তার বিথি (২১)। এর সাথে সে একাই জড়িত ছিলনা। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার সহযোগি হিসেবে এক ছেলে বন্ধুর নামও সে পুলিশের কাছে প্রকাশ করেছে। তার ওই সহযোগিকে ধরতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু পুলিশের তাৎক্ষণিক তৎপরতার কারণে বিথির সেই ইচ্ছেপূরণ হল না।

আজ সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জুনাইদকে ‘উদ্ধার’ অভিযানের বিবরণ দিতে গিয়ে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মাঈনুল ইসলাম। এসময় শিশু জুনাইদকে কোলে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন তার মা জাহেদা আক্তার।

এর আগে সোমবার ভোর ৪টার দিকে সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের চরখোয়াজ গ্রামের আব্দুর রব কন্ট্রাক্টর বাড়ীর ডাঃ নুর করিম নামে এক পল্লী চিকিৎসকের বাড়ি হতে জুনাইদকে উদ্ধার করে পুলিশের একটি বিশেষ দল। এসময় অপহরণকারীনি রোকসানা আক্তার বিথিকে গ্রেফতার করা হয়। অপহরণের পর ওই বাড়িতে এসে তার প্রেমিকের কাছে আশ্রয় নিয়েছিল সে।পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বিথির ওই কথিত প্রেমিক পালিয়ে যায় বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাঈনুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে জানান, রবিবার দুপুর ২টার দিকে জুনাইদকে ছাগলনাইয়ার পৌর শহরের কলেজ রোড হতে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানতে পারে পুলিশ। তার পরিবারের অভিযোগের পরপরই সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযানে নামে ছাগলনাইয়া থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি) সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত দল। দীর্ঘ ১২ ঘন্টা অভিযান পরিচালনা করে তথ্য প্রযুক্তি ও স্থানীয় সোর্সের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করতে সমর্থ হই আমরা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রবিউল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছাগলনাইয়া সার্কেল নিশান চাকমা, ছাগলনাইয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক এএনএম নুরুজ্জামানসহ পুলিশ সদস্যরা।

উদ্ধারের পর মায়ের কোলে শিশু জুনাঈদ (বামে), পুলিশের হাতে গ্রেফতার রোকাসানা আক্তার বিথি (ডানে)

অপহরণের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে টাকার লোভে শিশুটিকে বিক্রি করার জন্য অপহরণ করেছে বলে বিথি পুলিশকে জানিয়েছে। অপহরণে তার এক ছেলে বন্ধুও সহযোগিতা করেছে বলে সে স্বীকার করেছে। আমরা তাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

মাঈনুল ইসলাম জানান, তাকে আগামীকাল আদালতে হাজির করে রিমান্ডের জন্য আবেদন করবে পুলিশ। তখন জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ঘটনার মূল রহস্য উম্মোচন করতে পারব আমরা।

বুকের সন্তানকে ফিরে পেয়ে পুলিশকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান মা জাহেদা আক্তার। তিনি বলেন, পারিবারিক সম্পর্কের সূত্র ধরে গত শুক্রবার রোকসানা আক্তার বিথি আমাদের বাসায় বেড়াতে আসে। শনিবার সকালে ছাদে ছবি তোলার কথা বলে, আমার বড় সন্তান নুসরাত জাহান (৫) ও ছোট সন্তান জুনাঈদ হোসেন কে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। অনেক্ষণ পর নুসরাত জাহান ফিরে এলেও রোকসানা আক্তার ও জুনাঈদ আসেনি। মেয়েকে জিজ্ঞেস করলে মেয়ে বলে রোকসানা জুনাঈদকে নিয়ে সিএনজি করে চলে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ছাগলনাইয়া থানায় অভিযোগ করেছিলাম। তিনি বিথির উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।

গতকাল রবিবার সকাল ৯টার দিকে ছাগলনাইয়ার পৌর এলাকা হতে জুনাইদকে কৌশলে অপহরণ করে পালিয়ে যায় ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর গ্রামের শাহজাহানের স্ত্রী রোকসানা আক্তার বিথি।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম জানান, বিথির মুঠোফোনের কললিস্ট যাচাই করে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে সোনাগাজীতে বিথির অবস্থান করা হয়েছিল। এরপরই শিশু জুনাইদকে উদ্ধার করতে রোববার রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোঃ মাঈনুল ইসলামের নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অপরহণের পর শিশুটিকে নিয়ে আব্দুর রব কন্ট্রাক্টর বাড়ীর ডাঃ নুর করিমের তার প্রেমিকের বাড়িতে এসে আশ্রয় নেয়। পরে তাদের ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।