ফেনী জেলা পরিষদ উপ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ১০জনের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি খায়রুল বাশার মজুমদার তপনের নাম চুড়ান্ত করা হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বিধি মোতাবেক পদটি এখনো শূণ্য না ঘোষণা করায় দলের পক্ষ হতে তার নামটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি বলে দলের একটি নির্ভরশীল সূত্রের তথ্যমতে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ফেনী জেলা পরিষদ উপ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকালে গণভবনে দলীয় প্রধান ও মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তার নাম চুড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বয়ং ফেনী-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। সোমবার সন্ধ্যায় নিজের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেজে খায়রুল মজুমদার তপনকে ফেনী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়টি জানান তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের ‘সুপারিশ’কে মূল্যায়ন করায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন তিনি।

আর এই খবর প্রকাশের পর হতেই ফেইসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অভিনন্দনের বন্যা বইছে প্রতি খায়রুল বাশার মজুমদার তপনের প্রতি। তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় হতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

এমনকি ওই পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ফেনী-২ আসনের সাবেক সাংসদ জয়নাল আবেদীন হাজারীও তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। ফেইসবুকে দেয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘নেত্রী যাকে যোগ্য মনে করেছেন তাকেই নমিনেশন দিয়েছেন।’

জানা গেছে, ফেনী জেলা পরিষদ উপ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেতে ১০ জন আবেদন করেছিলেন। মনোনয়ন পেতে বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান ছাড়াও সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, আইনজীবী, শিক্ষক, যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাও আবেদন করেছিলেন। তবে শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত প্রার্থীতার বিষয়ে সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীর উপস্থিতিতে জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরী সভায় ওই পদে দলের প্রার্থী হিসেবে খায়রুল বাশার মজুমদার তপনের জন্য এককভাবে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। বৈঠকে উপস্থিত মনোনয়ন প্রত্যাশী ৫জনও জেলা আওয়ামী লীগের গৃহীত সিদ্ধান্তের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে তপনের নাম সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। সোমবার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় জেলা আওয়ামী লীগের এই সুপারিশের প্রতি কেন্দ্রীয় নেতারাও সাড়া দিয়েছেন।

এতে করে খায়রুল বাশার মজুমদারের ইচ্ছা ও স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। গত ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ আসন হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। সেবার জোটের শরিকদের আসন ছেড়ে দিলে তাকে বাদ দিয়ে জাসদের কেন্দ্রীয় নেত্রী বর্তমান ফেনী-১ (ছাগলনাইয়া-ফুলগাজী-পরশুরাম) আসনের সাংসদ শিরীন আক্তারকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। তাই সেবার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল তপনের। এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ফেনী-১ আসনে নৌকার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আবারও গণসংযোগ করেছিলেন তিনি। কিন্তু এবারও তপনের ভাগ্যে ঈপ্সিত সুযোগ মেলেনি পরশুরামের সন্তান খায়রুল বাশার মজুমদার তপনের।

তবে এবার জেলা পরিষদ উপ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজের সেই আকাঙ্খা পূরণের পথে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সভাপতি। তবে তিনি কি পারবেন নিজেকে জেলা পরিষদের প্রয়াত চেয়ারম্যান আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর জায়গায় নিজের অবস্থান তৈরি করতে? তার গুণে নিজেকে গুণান্বিত করতে? সে প্রশ্ন ফেনীর সাধারণ মানুষের মনে।

গত ৬ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর মৃত্যুতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদটি শূণ্য হয়। ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি। এর আগে ৫ বছর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন আজিজ আহম্মদ চৌধুরী।

পদটি শূণ্য হওয়ায় ফেনী জেলা পরিষদ উপ নির্বাচনে গত ১৭ সেপ্টেম্বর হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।