‘ভাই আমগোরে খাইতো অইব, আর খাইত অইলে কিনতো অইব, ২০০ টাকা হোক বা ৩০০ টাকা, পেট চালাইতে অইলে কিনন লাইগবো’।

কাঁচামরিচের দাম বাড়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আক্ষেপভরে এভাবেই উত্তর দিলেন ফারজানা আক্তার নামে একজন ক্রেতা।

আজ শনিবার (১০ অক্টোবর) ফেনী বড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম উঠানামা করছে ২১০ থেকে ২২০ টাকার মধ্যে। গত ৪ মাস ধরেই লাগামহীন রয়েছে কাঁচামরিচের দাম। আর দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের। কাঁচামরিচসহ সবজি বাজারের দামের ক্রমাগত উর্ধ্বগতির সাথে তাল রাখতে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন তারা।

বাজার করতে আসা আরেক ক্রেতা সুকমল সেন দৈনিক ফেনীকে বলেন, গত সপ্তাহে আমি ১৭০ টাকা করে মরিচ কিনলাম। আজকে বাজারে তা ২১০-২২০ টাকা চাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ব্যাবসায়ীদের কাছে অনেকটা জিম্মি।

আমাদের খেতেও হবে, তাই কিনতেও হবে। আর কিনতে হলে ব্যবসায়ীরা যে দাম হাঁকাবেন, সে দামেই কিনতে হবে, এক কথায় আমরা নিরুপায়।

তিনি আরও বলেন, শুধু কাঁচা মরিচ না, সব ধরনের সবজির দামই অনেক বেড়েছে। আমরা যারা মধ্যবিত্ত আছি, তারা সবজি কিনলে, আরেকটা জিনিস বাদ দিতে হচ্ছে।

ফেনীর বাজারে কাঁচা মরিচের স্থিতিশীল নয়। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেন জানা গেছে, কোনদিন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, আবার মুহুর্তের মধ্যে তা হয়ে যাচ্ছে ২০০-২২০ টাকা।

দাম বাড়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে দাউদপুর খাজা আহম্মদ পৌর তরকারি আড়ৎ এর কাঁচামাল আড়ৎ সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মেসার্স নিউ আনন্দ বাণিজ্যালয়ের সত্ত্বাধিকারী কাজী নুরুল আলম দৈনিক ফেনীকে বলেন, আমাদের এখানে বগুড়া মেহেরপুর, পাবনা অথবা কুষ্টিয়া থেকে কাঁচা মরিচ আসে। সেসব জায়গাতে গত কিছুদিন আগে বৃষ্টি হওয়াতে কাঁচামরিচের অনেক ক্ষতি হয়েছে। যে কারনে যেখানে আগে আমরা প্রতিদিন ২০-২৫ বস্তা কাঁচা মরিচ পেতাম বিক্রির জন্য। এখন তা কমে ২-৩ বস্তায় নেমেছে। প্রতি বস্তায় সর্বোচ্চ ১৫০-১৬০ কেজি মরিচ থাকে।

তিনি বলেন, যে পরিমাণ চাহিদা, সে পরিমাণে উৎপাদন নেই। তাই বাজারে কাঁচামরিচের আমদানি কমে গেছে। তাই দামও বেড়ে গেছে।

যমুনা বাণিজ্যালয়ের সত্ত্বাধিকারী মমিনুল হক বলেন, আমাদের ফেনী থেকে ঢাকার বাজারে চাহিদা বেশী। তাই আমাদের এখানে তুলনামূলক অনেক কম মরিচ আসে।

তিনি বলেন, আমদানির সাথে দর উঠানামা করে। আজকে সকালে ২ গাড়ি মরিচ এসেছে। পাইকারীতে আমরা বিক্রি করছিলাম ১৯০ টাকায়। এরপর আবার ২-৩ গাড়ি মরিচ বাজারে প্রবেশ করায় দাম কমে দাঁড়ায় ১৫০ টাকায়।

এমরান হোসেন নামে বড় বাজারের একজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, আমরা ২২০ টাকা দরে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি করছি। কেউ একসাথে এক কেজি নিলে ২১০ টাকা পর্যন্ত রাখছি। পাইকারীতে মরিচের দাম বেশি হওয়ায় আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। দামের কারণে মরিচের ক্রেতা কম, কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই।

বাজার ঘুরে দেখা যায় প্রতিটি সবজির দাম আগের তুলনা অনেক বেড়েছে। শুক্রবার প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকায়, দিনের ব্যবধানে আজ প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছিল ৫০ টাকায়।