‘যাচ্ছি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চট্টগ্রাম। বাসে উঠে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি টের পাইনি। যখন ঘুম ভাঙলো তখন চারিদিকে শুধু চিৎকার আর আহাজারি। আমি খেয়াল করলাম রক্তে আমার শার্ট ভিজে গেছে। মাথা ঠিকভাবে তুলতে পারছি না। কোনোমতে জানালার কাঁচ ভেঙে বাসের বাইরে চলে আসি। বাইরে এসে বাসের অবস্থা দেখামাত্রই আঁতকে উঠেছিলাম। ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বাস দুমড়ে-মুচকে গেছে।’

এভাবেই রবিবার (১১ অক্টোবর) ভোরে ফেনীর ফতেহপুর এলাকায় সংঘটিত দুর্ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন মনিরুল নামে এক আহত বাসযাত্রী।

ধাক্কা লাগার কারণ গেইটম্যান রেলবার বন্ধ করে নি। যার ফলে খোলা রেলক্রসিং এ বাসের সঙ্গে ট্রেনের ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এতে প্রাণ হারান ৩ জন এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত নিহত একজনের পরিচয় মিলেছে। তার নাম মোঃ সাদ্দাম হোসেন। তিনি কুমিল্লার সুয়াবাজারের কৃষ্ণপুরের তাজুল ইসলামের ছেলে।

এ ঘটনায় ওই রেলক্রসিংয়ের গেইটম্যান আবুল কালামকে বরখাস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ফেনী স্টেশন ইউনিটের সাব ইন্সপেক্টর মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি জানান, এ ব্যাপারে গেইটম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি আমরা। তার ভাষ্যমতে, সে মহাসড়কের অপরপাশে দক্ষিণ দিকে রেলবার আগে নামায়। কারণ ওদিক থেকে অন্যান্য গাড়ি আসছিল। কিন্তু উত্তর দিক হতে আসা বাসটি রেলবার ফেলবার আগেই লাইনের উপর উঠে যায়। ট্রেনটি বাসের পেছনের অংশে ধাক্কা দিলে তা একপাশে কাত হয়ে পড়ে যায়।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় মামলায় দায়ের করা হয়েছে ও ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আব্দুস শুক্কুর নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আমি সকালে নামায পড়তে বের হয়েছিলাম। তখনই একটি বিকট শব্দ হয় এবং দৌঁড়ে গিয়ে বাসটি রাস্তার পাশে পড়ে আছে। তিনি বলেন, গেইটম্যান রেলবার ফেলতে দেরি করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন গেইটম্যান যদি সময়মতো দুই দিকের গেইট ফেলতে পারত এই সমস্যা হতোনা।

সুমন ব্যাপারি নামে আরেকজন বলেন, বাসের চালক অতিরিক্ত যাত্রীর আশায় ওভারপাসের উপর দিয়ে নিচ দিয়ে যাচ্ছিল। উপর দিয়ে গেলে এ ঘটনা ঘটত না।

বাসটি কেন ওভারপাস দিয়ে না গিয়ে, নিচ দিয়ে যাচ্ছিল সেই নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। বাসের কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, নুরজাহান হোটেল থেকে যাত্রা শুরু করার পর চালক চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ঘটনার পরে তার কোন সন্ধান মেলেনি।

ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডিএন-১ আব্দুল হানিফ মুকুল, ডিএসটিই জাহেদ আরেফিন পাটোয়ারী তন্ময়, ডিটিও স্নেহাশীষ দাশ গুপ্ত, পাহাড়তলীর ডিএমও তন্ময় দত্ত ও ডিএনএ (লোকো) ওয়াহিদুর রহমানকে সদস্য করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

উল্লেখ্য রবিবার (১১ অক্টোবর) ভোর পৌনে ৬টার দিকে রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামগামী এনআর শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী ঢাকা মেইল ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার খবর পেয়ে উদ্ধার অভিযানে নামে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ২ জনের মরদেহ ও হাসপাতালে নেবার পথে আরও একজনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও ১৫ জন। এদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশংকাজনক।