ফেনীর কাজিরবাগের রুহিতিয়ায় যে গেঞ্জি পরা অবস্থায় শিপন ওরফে সালমানের লাশ পাওয়া গেছে, জামাটি তার নয়। এমনটাই দাবী করছেন নিহতের মা সেলিনা আক্তার। তিনি বলেন, শনিবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঘর হতে বের হওয়ার সময় তার গায়ে এরকম জামা ছিল না।

ফেনী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, রবিবার রাতে ৭ জনের নাম উল্লেখসহ একাধিক অজ্ঞাত আসামীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে নিহত শিপনের মা। এ ঘটনায় সুমি ও তার বাবা হাশেম আটক রয়েছে।

নিহতের নানা আবুল কাশেম জানান, আসামীদের মধ্যে রয়েছে তার প্রেমিকা সুমি, সুমির বাবা হাশেম ও মা রোকেয়া বেগম। রবিবার তাদের রুহিতিয়া পাটোয়ারী বাড়ির পাশে শিপনের লাশ পড়েছিল। অন্য আসামীরা হল নিহতের বন্ধু তৌহিদ, সজিব, আসিফ ও আবদুল কাদের।

আরও পড়ুন⇒ ‘কাজীরবাগে যুবকের চোখ উপড়ানো লাশ উদ্ধার’

আবুল কাশেম বলেন, কাদের আমাকে ফোন দিয়ে বলে, পাটোয়ারী বাড়ির বাথরুমের সামনে একটি অজ্ঞাত লাশ পড়ে আছে। লাশ উদ্ধারের সময় সে নিজে ঘটনাস্থলে থাকলেও সকাল সাড়ে ১০টার পর উধাও হয়ে যায়। তিনি বলেন, সুমির সাথে শিপন কথা বলতো, তার সাথে বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। তিনি অভিযোগ করেন, কাদেরের সাথেও মেয়েটির প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল।

কাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, কাদের নানার বাড়িতে থাকে। তার নানার নাম জাকের হোসেন। কাদের ৬ বছর বয়সে বাবার বাড়ি থেকে নানার বাড়ি চলে আসে। সে নানার বাড়িতে থেকে সামান্য লেখাপড়া করেছে। পরবর্তীতে সে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবনে চায়ের দোকানে চাকরি করেছে। এখন সে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিকাশের কাজ করে।

নিহতের খালা নিলুফা আক্তার জানান, শনিবার রাতে ঘরে না ফেরায় পরিবারের সবাই শিপনকে খুঁজতে থাকে। তাকে ফোনে না পেয়ে বন্ধু তুষার (বাস ড্রাইভার) বন্ধু তৌহিদকে শিপনের ব্যাপারে জানতে ফোন দিলে সে জানায়, আমরা তো গতকাল (শনিবার) রাতে একসাথে ছিলাম। একসাথে লুডু খেলছি রাত ১০টা পর্যন্ত।

নিলুফা জানান, তৌহিদ, আসিফ, কাদেরসহ আরও কয়েকজন একসাথে ছিল। তিনি বলেন, কাদের ঘটনাস্থলে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ঐখানে ছিল। সে সবাইকে ছবি তুলে দিচ্ছিল। অথচ সে সকাল থেকে বলে বেড়াচ্ছিল অজ্ঞাত লাশ।

শিপনের সাথে কাদেরের কখনও ঝগড়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে নিহতের ছোট ভাই শামীম ও শাহাদাত বলেন, ভাইয়া কখনও মেয়ের ব্যাপারে বন্ধুর সাথে ঝগড়ার কথা আমাদের বলেনি বা আমরা শুনিনি।

জেলা পরিষদ শিশুপার্কে কর্মরত শাহাদাত (২১) বলেন, ভাইয়ার সাথে কাদেরের কোন ঝগড়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে কাদেরও সুমিকে পছন্দ করতো।

তবে এ বিষয়ে আসামীদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এর আগে রবিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পূর্ব রুহিতিয়া গ্রামের হাজী বাড়ির মৃত শহিদুল ইসলাম মনু মিয়ার ছেলে সালমান হোসেন শিপনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। শিপন ঢাকায় স্যানিটারি মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করত। শুক্রবার সে বাড়িতে আসে। নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার দুহাতের রগ কাটা ছিল, এছাড়া বাম চোখ ছিল উপড়ানো। তার পুরুষাঙ্গেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।