ছাগলনাইয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম মঞ্জুর মুর্শেদসহ ১১ পুলিশ সদস্যসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের হত্যা চেষ্টা ও ইয়াবা দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। আজ মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) সকালে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কামরুল হাসানের আমলী আদালতে মোঃ গিয়াস উদ্দিন দুলাল নামে ছাগলনাইয়ার পূর্ব পাঠানগড় এলাকার এক ব্যক্তি বাদী হয়ে এ অভিযোগ করেন। এতে ১১জন পুলিশের সদস্যের বাইরে বাকী দুইজন পুলিশের সোর্স।

বাদী পক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু জানান, আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোন কর্মকর্তাকে দিয়ে অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে।

এজাহার অনুযায়ী অন্যান্য আসামীরা হল, ছাগলনাইয়া থানার সাবেক এসআই মোঃ শহিদুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, এএসআই মোঃ ফিরোজ আলম, মোঃ মাহবুল আলম সরকার, এসআই মোঃ খোরশেদ আলম, কনস্টেবল সুকান্ত বড়ুয়া, থানায় কর্মরত বর্তমান কনস্টেবল মোঃ নুরুল আমিন, সাবেক কনস্টেবল মোঃ মাঈন উদ্দিন, বর্তমান কনস্টেবল মোঃ নুরুল আমিন, মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও পুলিশের দুই সোর্স ছাগলনাইয়ার উপজেলার এলনা পাথর এলাকার আবুল হোসেনের দুই ছেলে আবুল হাসেম ও আবুল খায়ের ছোটন প্রকাশ দালাল ছোটন।

বাদী গিয়াস উদ্দিন দুলাল অভিযোগপত্রে লেখেন, আমি একজন পিকআপ চালক ছিলাম। গত বছরের জানুয়ারীর ১৭ তারিখে আমি ফেনী সদরের কাজীরবাগে মাটি বহন করছিলাম। সেদিন আবুল হাসেম ও আবুল খায়ের নামে দুই সোর্সসহ পুলিশ সদস্যরা এসে আমার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওইদিন বিকালে তারা কাজীরবাগ হতে আমাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে ছাগলনাইয়ার পাঠাননগর এলাকায় ব্রাদার্স ব্রিকফিল্ডের নিয়ে যায়। সেখানে ওসি মোর্শেদ এসে আমার চোখ বেঁধে পুনরায় চাঁদা দাবী করেন। চাঁদা দিতে না চাইলে তারা সকলে মিলে আমাকে ক্রসফায়ারে দেবার হুমকি দেয়। এ খবর পেয়ে আমার মা ও বোন সেখানে ১ লাখ টাকা দেবার কথা বলেন। এতে রাজী না হয়ে তারা আমাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় মাইক্রোবাসে করে শুভপুর ইউনিয়নের বল্লভপুরে চম্পকনগর রাস্তায় মাথায় একটি জমিতে নিয়ে আমাকে মাটিতে ফেলে হত্যার চেষ্টা চালায়। এরপর ওসি মোর্শেদ ঘটনাস্থলে থাকা সুকান্ত বড়ুয়া নামে এক পুলিশ সদস্যের শটগান দিয়ে আমার ডান পায়ে ৩ রাউন্ড গুলি করে। এরপর তারা এলোপাথারি লাথি মেরে আমাকে মৃত্যু নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। এতে আমি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে আমার মৃত্যু হয়েছে ভেবে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে আমার দেহে প্রাণের অস্তিত্ব টের পেয়ে চিকিৎসকরা আমাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে প্রেরণ করেন। এর তিনদিন পর চিকিৎসকরা অস্ত্রোপাচার করে ডান পায়ের নিম্নাংশ কেটে বাদ দেন। এতে আমি পঙ্গু হয়ে পড়ি। পরে আমার বিরুদ্ধে থানার সাবেক পুলিশ উপপরিদর্শক মোঃ মাহবুবুল আলম সরকার ১৪শ পিস ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মিথ্যা মামলা (জিআর ১০/১৯) দায়ের করে কারাগারে প্রেরণ করে। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার সাবেক এসআই গত বছরের ২৭ জানুয়ারি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের করেন।

এরপর এ বছরের অক্টোবরের ১ তারিখে মামলার কাজে ফেনী কোর্টে আসলে পুলিশের সোর্স আবুল হাসেম আমাকে দেখে বলে, তুই মরে যাস নি? তোকে আবারও ক্রসফায়ারে দেব। কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলে, বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমাকে আবারো পুলিশ দিয়া ক্রসফায়ার করে টুকরা টুকরা করে পুড়িয়ে ফেলবে। ওই দুই সোর্স মাদক ব্যবসা ও চোরাচালানের সাথে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া তারা এলাকায় হুন্ডি ব্যবসা, খুনসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত। তাদের ভয়ে আমি ও আমার পরিবার জীবন শংকায় দিন কাটাচ্ছি। তারা পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক পুলিশ সদস্যদের লাভবান করতে আমার উপর এমন নারকীয় অত্যাচার করেছে।

পুলিশ কি অজুহাতে চাঁদা চেয়েছে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট করে তা বলেননি।