ফেনী শহরতলীর রাণীরহাটের হক কমিউনিটি সেন্টার হতে শিবির সন্দেহে আটক ৪৪জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সোমবার (১৬ নভেম্বর) রাতে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৫ এর ৩ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ওমর হায়দার।

মামলার বাদি উপ-পরিদর্শক এমরান হোসেন জানান, অজ্ঞাত আরও ৬০জনকে আসামী করা হয়েছে। আজ দুপুরে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গ্রেফতারকৃতদের বেশিরভাগের বয়স ১৬-১৮ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে ২৬ জনের বাড়ি ফেনী সদরে, ৬জনের বাড়ি দাগনভূঞায়, ৫ জনের বাড়ি ছাগলনাইয়ায়, ২জনের বাড়ি সোনাগাজী ও ২ জনের বাড়ি ফুলগাজীতে। এছাড়া ৩ জনের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও সেনবাগে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা তাদের সঙ্গীয় ৫০/৬০ আসামীসহ গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে সরকার, রাষ্ট্র ও বিচার বিভাগ নিয়ে বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য ও উস্কানীমূলক কথাবার্তা সম্বলিত প্রচার ও প্রচারণাপত্র নিয়ে আলোচনা ও নাশকতা করার পরিকল্পনা করছিল বলে স্বীকার করেছে। মামলার জব্দ তালিকায় মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত লিখিত ‘ জীবন বদলে যাবে’ এর ৮৫টি বই, ‘আমরা কি চাই, কেন চাই, কিভাবে চাই’ এর ১৮টি সংখ্যা, অধ্যাপক গোলাম আজম লিখিত ‘মনটাকে কাজে দিন’ ৫৮টি বই, ‘আদর্শ কিভাবে প্রচার করতে হবে’ ৮২টি ও একটি ডিজিটাল ব্যানারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার আসামীরা হল তানজিম উদ্দিন (১৭), সাখাওয়াত হোসেন (১৬), মওদুদুর রহমান (১৭), ইব্রাহিম মাসুদ (১৮), শাহরিয়ার ইসলাম (১৬), মোঃ ইমরান উদ্দিন (১৬), মোঃ রাকিব হোসেন (১৬), সাখাওয়াত হোসেন শাকিল (১৮), ফোরকান আহমেদ ভূঞা (১৮), আবদুল্লাহ আল সামী (১৮), আবু সায়েম শামীম (১৬), আবু নাইম সিফাত (১৭), মোঃ ফয়সাল (১৬), আবদুল হাফিজ আক্কাস (১৬), মোঃ জাহিদ হোসেন (১৬), মোঃ আবদুল কাউয়ুম (১৭), মোঃ আবদুল্লাহ বিন হারুন (১৮), মোঃ সাজ্জাদ হোসেন (১৬), মোঃ নোমান (১৬), মোঃ শরীফুল ইসলাম (২৪), মোঃ মেহেদী হাসান (১৮), বাহা উদ্দিন ফারুকী (১৬), মোঃ নজরুল ইসলাম (১৯), আবদুল্লাহ আল মামুন (১৮), মনসুর আহমেদ (১৭), আমজাদ হোসেন (১৭), মেহরাজুল ইসলাম (১৬), আবদুল মমিন (১৭), মোঃ জাহিদ (১৭), ইফরাত হোসেন সাজিদ (১৬), মোঃ মেজফার উদ্দিন (১৭), নুরুল আমিন (৪৫), মোঃ আরাফাত হোসেন (১৭), মোঃ হাবিব সাইফ (১৭), মোঃ আবদুল বারী (১৬), মোঃ আল ফয়সাল (১৬), শাহরিয়ার কাউসার (১৭), মোঃ সোরাইল (১৭), মোঃ জোবায়ের (১৮), মাহমুদ হাসান (১৭) মোঃ ইমরান হোসেন (১৬), অনিক (১৭), মোঃ আসিফ (১৭) ও সাইফুল ইসলাম (১৭)।

গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে বাজারের হক কমিউনিটি সেন্টারে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ফেনী শাখার ব্যানারে আয়োজিত একটি সভা হতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সহায়তা তাদের আটক করেছে পুলিশ।

কাজীরবাগ ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগ জানান, খবর পেয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে হাজির হয়। এসময় তারা আমাদের উপর হামলা চালায়। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন।

চেয়ারম্যান জানান, ‘নবীনবরণ’ নামীয় অনুষ্ঠানের নাম করে ফেনী ও বাইরের এলাকা হতে শিবিরের প্রায় ২শ জন সেখানে নেতাকর্মী জড়ো হয়েছিল। ঘটনা সহিংসার দিকে মোড় নিলে পুলিশকে জানালে তারা এসে ৪৩ জনকে আটক করে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় উপস্থিত শিবিরের অধিকাংশ কর্মী পালিয়ে যায়। এছাড়া ওই স্থানে শিবিরের বিভিন্ন প্রচার ও প্রচারণাপত্র জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ওই কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজার নুরুল আমিনকেও আটক করেছে। 

ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪৩জনকে আটক করে দুই ভাগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্যমতে আরও একজনকে আটক করা হয়। শেষে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।