এইচএসসিতে বিগত ৫ বছরের মধ্যে ফেনীতে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। পাশ ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এটি একটি নতুন রেকর্ড। ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ফেনীর ৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ১০ হাজার ১১৩জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবার কথা ছিল, কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে পরীক্ষা ছাড়াই জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফল এবং অনলাইন ক্লাসের মূল্যায়নের ভিত্তিতে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে, যাদের সবাই পাস করেছেন। আর এ বছর ফেনীতে এইচএসসিতে স্মরণ কালের সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, ২০২০ সালের এইচএসসিতে ফেনীর ৬টি উপজেলা হতে ৯১০ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বিমল কান্তি পালন দৈনিক ফেনীকে বলেন, ফেনীর ইতিহাসে উচ্চ মাধ্যমিকে এটি সর্বোচ্চ সংখ্যক জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ঘটনা।

কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, এবারের এইচএসসিতে ফেনী সদরের ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ৫ হাজার ৩৮২জন, ছাগলনাইয়ার ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ১ হাজার ৩৪১জন, দাগনভূঞার ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ১ হাজার ৩০০জন, ফুলগাজীর ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ৮৭৯জন, সোনাগাজীর ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ৭২৭জন এবং পরশুরামের ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ৪৮৪জন শিক্ষার্থী ফরম ফিলআপ করেছিল, যাদের সবাই পাশ করেছে। মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪ হাজার ৪৬৬জন ছেলে ও ৫ হাজার ৬৪৭জন মেয়ে।

এর মধ্যে ফেনী সদরে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৮১৮জন, ছাগলনাইয়ায় ৪১ জন, সোনাগাজীতে ২০ জন, ফুলগাজীতে ১২ জন, দাগনভূঞায় ১১জন ও পরশুরামে ৮জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।

তবে জিপি-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে আছে। মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ৫৬৭জন মেয়ে ও ৩৪৩জন ছেলে রয়েছে।

ফেনী গালর্স ক্যাডেট কলেজের অধ্যক্ষ গ্রুপ ক্যাপ্টেন মুনিম মজলিস খান জানান, ২০২০ সালে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৫১ জন শিক্ষার্থীরা মধ্যে ৫০ জন গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাকী একজন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।

তবে ফেনী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বিমল কান্তি পাল জানান, কলেজে এখনও ফলাফল এসে পৌঁছেনি। তাই কলেজ হতে জিপিএ-৫ পেল তা নিশ্চিত নই।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এবার অনলাইনে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রে অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনও ফল পাঠানো হবে না।

ফলাফল আশানুরূপ হয়েছে বলছে এবারের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মহিপাল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম রিপা। সে জানায়, পরীক্ষা ছাড়া ফলাফল কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলছে। জানি না এই ফলাফল ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবনে কেমন প্রভাব ফেলবে।

রিপা জানায়, এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য কলেজে ভর্তির পর থেকে প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। তাছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় এইচএসসি ফলাফলের উপর প্রাপ্ত নাম্বারে ঘাটতি পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যে পরিস্থিতি তাতে পরীক্ষা দেয়াও সম্ভব ছিল না। তাই ফলাফলের দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করছি। ভর্তি পরীক্ষায় ভালো কিছু করব এই প্রত্যাশায় ফলাফল মেনে নিয়েছি।

বিগত ৫ বছরে ফেনীর এইচএসসি ফলাফলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে জেলার ৪১টি কলেজ থেকে ৯ হাজার ৮৭০ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছিল ৬ হাজার ২৬৮ জন। পাশের হার ছিল ৬৩.৫১%। সেবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৩৩ জন। শতভাগ পাশ করেছিল ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ২০১৮ সালে ১০ হাজার ৬২৭ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছিল ৫ হাজার ৪০২ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৭৯জন। সেবার পাশের হার ছিল ৫০.৮২%। ২০১৭ সালে জেলায় পাশের হার ছিল শতকরা ৪৪.৫০%। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৮৬ জন। ২০১৬ সালে পাশের হার ছিল ৬২.৫২% ও জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৪০ জন। ২০১৫ সালে ৯ হাজার ১৯৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৪ হাজার ৭২২ জন। পাশের হার ছিল ৫১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছিল ১৩৩ জন। ২০১৪ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১৬৬ জন শিক্ষার্থী।