ফেনীর সকল ইউনিয়নের উন্নয়নের স্বার্থে সচিবদের আরও উদ্যোগী হবার নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান। গতকাল বুধবার (৩ মার্চ) নিজ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন রকম অনিয়ম চলছে। পরিষদের সচিবরা হলো রাষ্ট্রের প্রতিনিধি। জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিনিধি। রাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করা তাদের দায়িত্ব। সরকারের স্বার্থ সংরক্ষণ করা সচিবদের দায়িত্ব। কিন্তু সচিবরা ঠিকভাবে কাজ করেনা। সচিবরা ইউপি চেয়ারম্যান ইউপি সদস্যদের সামনে কথা বলতে পারে না। তিনি সচিবদের সৎ সাহস নিয়ে ইউনিয়নে সরকারের প্রতিনিধি হয়ে জনগণের কল্যানে কাজ করার আহবান জানান।

গ্রাম আদালত সচল নেই উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, অনেক সচিবরাই ইউনিয়ন পরিষদ আইন ঠিকভাবে জানেনা। সঠিকভাবে আইন জেনে, পড়াশোনা করে আইন প্রয়োগ করার নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, সচিবরা তাদের জায়গায় কঠিন থাকে না বিধায় ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম ঠিকভাবে চলেনা। ইউনিয়ন পরিষদ আইনগুলো ঠিকভাবে জেনে কাজ করার আহবান জানান।

তিনি বলেন, অনিয়মের সাথে জড়িয়ে থাকার দায়ে অনেক চেয়ারম্যান মেম্বারদের বরখাস্ত করা হয়েছে। অনেক সচিব চেয়ারম্যানের প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হয়েও তার প্রতিনিধিত্ব করে না। জেলা প্রশাসক ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক বরাদ্দগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য সচিবদের নির্দেশনা দেন।

প্রশিক্ষণে সভাপতির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক ড. মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন বিষয়ে সচিবদের দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।

তিনি বলেন, যে ঘরে বাচ্চা জন্ম নিবে সেগুলো জন্ম নেয়ার আগে সচিবদের নিয়মিত তদারকি করে খোঁজ নিতে হবে। জন্ম সনদ নিশ্চিত করতে প্রসূতি মায়েদের জন্য শুভেচ্ছা উপহার পাঠাতে হবে। বাচ্চা জন্ম নেয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে জানানোর জন্য অনুরোধ লিখে পাঠাতে হবে। জানানোর পর জন্ম তারিখে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি সার্টিফিকেট তাদের পাঠাতে হবে। একইভাবে মৃত্যুর ক্ষেত্রেও চেয়ারম্যান কর্তৃক শোক বার্তা প্রেরণ করতে হবে। এতে করে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সঠিকভাবে নিশ্চিত হবে।

তিনি বলেন, প্রত্যেক দেশের প্রতিটি নাগরিকের রেজিষ্ট্রেশন আছে। তাই তারা উন্নত প্রযুক্তিতে পৌঁছে গেছে। কিন্তু আমরা এখনও পিছিয়ে আছি। তাই সকল নাগরিকের জন্ম মৃত্যু সনদ সঠিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। তিনি ইউপি সচিবদের আন্তরিকতার সাথে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করিয়ে দিয়ে জনগণকে পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করে দেয়ার নির্দেশনা দেন।

প্রশিক্ষণ শেষে স্থানীয় সরকার শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাবিব উল্ল্যাহ অবসর গ্রহণ করায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এসময় জেলার ইউনিয়ন পরিষদের সকল সচিবরা তার চিকিৎসার জন্যে ২০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন। এসময় জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান হাবিব উল্ল্যাহর চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা সহযোগিতা করার ঘোষণা দেন।

সভায় ফেনীর ৪০ ইউনিয়ন পরিষদের সচিবরাসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।