স্বামীর ভিটার ওপর জরাজীর্ণ মাটির ঘর বৃদ্ধা হাজেরা বিবির আর্থিক তীব্র অনটন প্রকাশ করছে। তবে সচেতন এ মানুষটি সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে ঘরের খবর রাখেন। তবু ঘর পেতে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন জোহরা আক্তার নামে স্থানীয় এক মহিলাকে। এমন চিত্র ছাগলনাইয়া পৌর এলাকার আট নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম মটুয়ায়।

অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে দৈনিক ফেনী প্রতিবেদক ঘটনাস্থলে গেলে মধ্যম মটুয়া ফুলজার মুন্সি পাড়ার মৃত রমজান আলীর স্ত্রী বৃদ্ধা বিবি হাজেরা জানান, দশ বছর আগে স্বামী মারা গেছে। একমাত্র ছেলের সাথে যোগাযোগ নেই। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ভাঙ্গা ঘরে একা বসবাস করি। স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম ভূঞা সরকারি বরাদ্দে আমার স্বামীর ভিটায় একটি ঘর করে দেবে বলেছে। গত বছর রমজান মাসে কাউন্সিলরের চাচাতো বোন জোহরা জানায় ২০ হাজার টাকা দিলে কাউন্সিলর একটি সরকারি ঘর দেবে। নতুন ঘরের আশায় আশপাশের লোকজন থেকে ধার করে জোহরাকে টাকা দিয়েছি।

একই এলাকায় অন্য ভূক্তভোগী আবু তাহের মিলনের অভিযোগ, তার স্ত্রী সালমা আক্তার সৌদি আরব থাকেন। জোহরা সরকারি বরাদ্দের ঘর নির্মাণ করে দেবে বলে কাউন্সিলরের নাম ভাঙ্গিয়ে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। একই সাথে আবু তাহেরের বৃদ্ধা মাকে বয়স্ক ভাতা কার্ড পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ৫ হাজার টাকা নিয়েও ভাতার বই দেয়নি জোহরা।

নৈশপ্রহরী হাবিব উল্যাহ জোহরার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জানান, সে আমাকে বলেছে সরকারি ঘর যদি দুই কক্ষ বিশিষ্ট হয় ২৫ হাজার আর যদি চার কক্ষ বিশিষ্ট হয় তাহলে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে।

নৈশপ্রহরীর স্ত্রী আছিয়া খাতুন (৬৬) ও একই বাড়ীর জাফর আহম্মদের স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে (৬৫) বয়স্ক ভাতার কার্ড দেবে বলে ৩ হাজার টাকা করে জোহরা নিয়েছে বলে জানান অভিযোগকারীরা।

জমি আছে ঘর নেই এমন অসহায়দের সরকারি বরাদ্দের ঘর দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জোহরা আক্তার (৩৭) নামে এক নারীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও এই নারী স্থানীয় অসহায় নারীদের বিধবা ও বয়স্ক ভাতার কার্ড বানিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা।

জোহরা আক্তার মধ্যম মটুয়ার আবু তাহের পাটোয়ারী বাড়ীর প্রবাসী আবু তাহেরের স্ত্রী। তিনি নিজেকে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়ার চাচাতো বোন দাবি করেন। অভিযোগকারীরা জানান, কাউন্সিলরের বাহক হয়ে টাকা গ্রহণ করছে জোহরা আক্তার।

তবে এমন অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে জোহরা আক্তার বলেন, আমি কোন টাকা নেইনি। তবে ঘর নির্মানের কাজ শেষ হলে কাউন্সিলরকে কিছু টাকা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন জোহরা।

তবে অভিযুক্ত জোহরাকে চেনেন না দাবি করে কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম ভূঞা বলেন, জোহরাকে আমি চিনি না। তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেইনি এবং কাউকে নিতেও বলিনি। পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে কুচক্রী মহল আমার জনপ্রিয়তাকে বিতর্কে মুখে ফেলতে এমন ষড়যন্ত্র করছে।

এমন অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া তাহের।