আগামীকাল (১৯ মে) বিকাল ৩টায় কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফেনীতে জনসমাবেশ সফলভাবে পালন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিএনপির নেতারা। তবে সমাবেশকে কেন্দ্র করে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ মে) বিকাল থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দলের ৩০ জনের বেশি বিএনপি নেতাকর্মী হামলার শিকার হয়েছে বলে দাবি করছে তারা। এজন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বিএনপির নেতারা বলছেন, সমাবেশ বানচাল করতে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে দমাতে চাইছে সরকার দলীয়রা।

জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার জানান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি হামলা, ভাংচুরসহ লুটপাট করছে। এমন হীন কাজ করে বিএনপির আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল দৈনিক ফেনীকে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আগামীকালের সমাবেশ বানচাল করতে জেলাজুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে ভাংচুর ও হামলা শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত ৩০ জনের অধিক নেতাকর্মী তাদের হামলায় আহত হয়েছে। এ ধরনের অন্যায়ের নিন্দা জানানোর ভাষা নেই।

তবে বিএনপির এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলছে আওয়ামী লীগ। এটিকে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল দাবি করে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক একে শহীদ উল্ল্যাহ খোন্দকার জানান, বিএনপির সমাবেশ করবে এটি নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যথা নাই। আওয়ামী লীগের কোন কর্মসূচিও নেই। আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ বিষয়ে কিছু জানেনা। তাদের এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। 

তবে হামলা-ভাংচুর চালিয়ে বিএনপির সমাবেশ বন্ধ করা যাবে না বলছে বিএনপি। সমাবেশ করতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বিএনপি নেতা আলাল বলেন, যেকোন মূল্যে জনসমাবেশ সফল করা হবে। বিএনপির কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিশৃঙ্খলা করতে চায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।

জেলা বিএনপি সূত্র জানায়, হামলায় পরশুরাম উপজেলা যুবদলের সভাপতি শাকিল, ফেনী সদর উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ইয়াছিন আরাফাত, মোটবী ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি বাদল, যুবদল নেতা ইয়াছিন, মাসুম, ছনুয়া ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা রিদয় ও ওমর গুরুতর আহত হয়েছে। আহতরা ফেনী জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। এছাড়া পাঁচগাছিয়া এলাকায় বিএনপি নেতা গিয়াস ও নওশাদসহ নেতাকর্মীরা  হামলা-ভাংচুরের শিকার হয়েছেন।

বিএনপি জানায়, উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচার গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে কেন্দ্র হতে এ সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ফেনী জেলা বিএনপি সূত্র আরও জানায়, সময়সূচি নির্ধারণ হলেও সমাবেশের স্থান নিয়ে এখনও জটিলতা কাটেনি। জেলা বিএনপি সমাবেশের জন্য শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্ধারণ করলেও প্রশাসনিক সম্মতি মেলেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইসলামপুর রোডস্থ দলীয় কার্যালয় সংলগ্নে জনসমাবেশ করার কথা বলা হয়েছে। সূত্র জানায়, সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, যুগপৎ আন্দোলনের সর্বশেষ কর্মসূচি হয় এপ্রিলের প্রথম দিকে রমজান মাসের শুরুতে। এরপর এটিই প্রথম কর্মসূচি।

গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিল অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি জোট যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে। এরপর ধারাবাহিকভাবে অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ সমাবেশ, বিভাগীয় সমাবেশ, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, মহানগর-জেলা-থানা-ইউনিয়ন পর্যায়ে নীরব পদযাত্রার কর্মসূচি করেছে তারা।