সরকারকে হুশিয়ারি দিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেছেন, এতো হামলা-ভাংচুর, বাঁধার পরেও ফেনীর সমাবেশে মানুষের যে উপস্থিতি তা অত্যান্ত আশাব্যঞ্জক। এ অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক শিক্ষা যদি সারাদেশের আন্দোলনে কাজে লাগাতে পারি তাহলে আসন্ন কুরবানি ঈদের আগেই হাসিনা সরকার কুরবানি হয়ে যাবে। এজন্য সকলে ঐক্যবদ্ধ থেকে সাহস নিয়ে দাঁড়াতে হবে।

আজ শুক্রবার (১৯ মে) বিকালের দিকে ফেনী বিএনপি আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এধরনের মন্তব্য করেন তিনি।

জনগণই বিএনপির বড় শক্তি উল্লেখ করে মো. শাহজাহান বলেন, বিএনপির এতো শক্তি কোথায় সে প্রশ্নের উত্তরের জন্য ফেনী এসে দেখে যান।বিএনপির শক্তি দেশের জনগণ। আপনাদের মত ভারত, পুলিশ কিংবা সন্ত্রাসী বাহিনী না। এদেশের জনগণই আমাদের বড় শক্তি।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে দলের এ শীর্ষ নেতা আরও বলেন, মাফ চেয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে নিজের সাথে সাথে দেশকেও শান্তিতে থাকতে দেন। তা না হলে শেষ পর্যন্ত হাসিনা সরকার বেগম খালেদা জিয়ার কাছে মাফ চাইতে হবে। হয়তো তখন মাফ চাওয়ার সময়ও পাবে না।

জনসমাবেশ কেন্দ্র করে দলীয় নেতাকর্মীদের উপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, গতকাল থেকে নেতাকর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা করা হয়েছে। এটি অত্যান্ত ন্যাক্কারজনক। এতকিছুর পর আজকে বিএনপি নেতাকর্মীরা যেভাবে পুলিশের সাথে সাহস নিয়ে দাঁড়িয়েছে, তা আর কিছুদিন দাঁড়াতে পারলে তারা আর টিকবে না।

সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, সাবেক সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন। বক্তব্যে তিনি বলেন, আজকের এসব আন্দোলন হচ্ছে প্রস্তুতিমূলক। কুরবানি ঈদের পরে হবে মহা-আন্দোলন। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ভিপি জয়নাল বলেন, পুলিশ প্রশাসন আইনের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। আমরা দেশ স্বাধীন না করলে আজকে এসব পদে পাকিস্তানি পাঞ্জাবি-পাঠানরা থাকত। আজকে এতো সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পরে তারা একটি নির্দিষ্ট দলের হয়ে কাজ করছে। এসবের কপিয়ত অক্ষরে অক্ষরে দিতে হবে।

শহরের ইসলামপুর রোডস্থ দলীয় কার্যালয় সংলগ্নে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশ করেছে বিএনপি। তারা বলছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচার গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহারের সভাপতিত্বে সমাবেশে সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল।

সমাবেশে অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, সহ-গ্রাম সরকার বিষয়ক সম্পাদক বেলাল আহম্মদ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু তালেব, মশিউর রহমান বিপ্লব, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম আলো।

এতে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক এম এ খালেক, গাজী হাবিব উল্ল্যাহ মানিক, এয়াকুব নবী, আলাউদ্দিন গঠন, আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী, সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ফজলুর রহমান বকুল, সদস্য সচিব আমান উদ্দিন কায়সার সাব্বির, পৌর বিএনপির সদস্য সচিব এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া, দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকবর হোসেন, সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন সেন্টু, ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলমগীর বি এ, ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ফখরুল আলম স্বপন, পরশুরাম উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আবদুল হালিম, জেলা যুবদলের সভাপতি জাকের হোসেন জসিম, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক নঈম উল্যাহ চৌধুরী বরাত, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাইদুর রহমান জুয়েল, জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক, সামসুদ্দিন খোকন চেয়ারম্যান, জেলা মহিলা দলের সভাপতি জুলেখা আক্তার ডেইজি, জেলা শ্রমিক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হুমায়ুন চৌধুরী, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন মামুন, সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ আলম মিলন, জেলা তাঁতি দলের আহবায়ক সরওয়ার জাহান শ্রাবণ।

এর আগে দুপুর থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হয় নেতাকর্মীরা। এসময় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্নপর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এদিকে সমাবেশকে কেন্দ্র করে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, যুগপৎ আন্দোলনের সর্বশেষ কর্মসূচি হয় এপ্রিলের প্রথম দিকে রমজান মাসের শুরুতে। এরপর এটিই প্রথম কর্মসূচি।

গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিল অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি জোট যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে। এরপর ধারাবাহিকভাবে অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ সমাবেশ, বিভাগীয় সমাবেশ, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, মহানগর-জেলা-থানা-ইউনিয়ন পর্যায়ে নীরব পদযাত্রার কর্মসূচি করেছে তারা।