সোনাগাজী উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভবন সংকটে পাঠদান কার্যক্রম ব্যহত হলেও ব্যতিক্রম চরচান্দিয়া ইউনিয়নের পূর্ব বড়ধলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জানা গেছে, শ্রেণিকক্ষ সংকটে উপজেলার অনেক স্থানে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের আবেদন করা হয়েছে, সেগুলো নির্মাণে বরাদ্দ মেলেনি। তবে পূর্ব বড়ধলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট ৪২ শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য দুটি ভবন থাকলেও নতুন করে ৩ তলা বিশিষ্ট আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে তিনতলা বিশিষ্ট ভবনের একতলার ছাদ ঢালাই কাজ শেষ করা হয়েছে। এতে ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে একতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী না থাকলেও ‘অপ্রয়োজনে’ ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনের জন্য সরকারিভাবে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর, ক্রীড়া ও শিক্ষা সামগ্রী রয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়ে এগুলোর কোন ব্যবহার নেই। বিদ্যালয়ে ৬জন শিক্ষকের পদ থাকলেও শিক্ষক রয়েছেন ৩ জন।
বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার দুই বছর পর ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর ১৯৮৩ বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দুই কক্ষের একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৫ সালে পূর্ব বড়ধলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতল ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র সম্বলিত নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি বিদ্যালয়ে ৩ তলা বিশিষ্ট আরেকটি নতুন ভবন নির্মাণে বরাদ্দ দিয়ে ঠিকাদার নিয়োগ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। স্থানীয় ঠিকাদার রাশেদ আলম ভবন নির্মাণের কাজ করছেন।
আরও জানা গেছে, বিদ্যালয়ে ৪২জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন ৩জন শিক্ষক। তারা হচ্ছেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ইউনুস আলী, সহকারি শিক্ষক মারজাহানা বেগম ও তাসলিমা আক্তার। তাদের মধ্যে ডিসেম্বরে শিক্ষক মারজাহানা বেগম ডেপুটেশনে যাবেন। বাকী দুইজন দিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শিক্ষক সংকটে প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একসাথে পাঠদান করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়টি টিকিয়ে রাখতে বাইরের মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি দেখানো হয়ে থাকে। তাদের অনেকে বিদ্যালয় থেকে উপবৃত্তি পেয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। একটি সূত্র জানায়, এ বিদ্যালয় থেকে ২০২৩ সালে ২৮জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পেয়েছে।
জানা গেছে, বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিকে ৫ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৭ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৭জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১১ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৬ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ৭জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলী জানান, এলাকায় মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ায় শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসামুখি হয়ে পড়ছে। তাই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনদিন কমছে। নতুন ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৫ দিন আগে ভবনের প্রথম তলার ছাদ ঢালাই করা হয়েছে। আপাতত নির্মাণ কাজ একতলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
বিদ্যালয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ভর্তি দেখিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউনুস আলী বলেন, বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাছলিমা আক্তার এ কাজটি করেছেন। শিক্ষা অফিসের তদন্তে তা প্রমাণিত হওয়ায় তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুর রহমান জানান, বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে আবেদন পাঠানো হয়নি। মঙ্গলকান্দি সপ্রাবি, হাজীপুর সপ্রাবি, দশআনি সপ্রাবিসহ অনেকগুলো বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকায় ভবন নির্মাণের আবেদন করা হলেও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। যেখানে অপ্রয়োজন, সেখানে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসার কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম হওয়ায় শিক্ষক সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। উপজলোয় সহকারি শিক্ষা অফিসার সংকটে বিদ্যালয়গুলো সঠিকভাবে তদারকি করা সম্ভব হয় না। উপজেলায় ১১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় তদারকিতে রয়েছেন কেবল একজন সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার।
অপ্রয়োজনে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, ঢাকায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এগুলো দেখভাল করে। আবেদন করার প্রয়োজন হয়না, তাদের কাছে বিদ্যালয়ের তথ্য থাকে। সে অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে। অনেক সময় নতুন ভবনের বিষয়ে আমাদেরকে জানানো হয় না। বিদ্যালয় থেকে বা উপজেলা থেকে আবেদন করলে বরাদ্দ চলে আসে।