বিষাক্ত মশার কয়েল মানুষের প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক এসব কয়েল গর্ভপাতের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। কমে যাচ্ছে পুরুষের শুক্রানু। বেড়েছে প্রিম্যাচিউর বাচ্চার জন্মহার। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজিত 'অনুমোদনহীন বিষাক্ত মশার কয়েল: স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ভোক্তারা' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য জানান গাইনোকোলজিস্ট ডা. নওশিন শারমিন পূরবী।

ভেজাল মশার কয়েলে অতিরিক্ত পরিমাণে বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে গর্ভের শিশুও নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গর্ভস্থ শিশুরা নানা ত্রুটি, বিশেষ করে ঠোঁট কাটা ও বাঁকা হাত-পা নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। এছাড়া অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, কিডনি সমস্যা, নিউমোনিয়ার মতো কঠিন রোগ নিয়ে শিশুরা পৃথিবীতে আসছে বলে জানিয়েছেন ডা. পূরবী।

ডা. পূরবী বলেন, অননুমোদিত মাত্রার বিষাক্ত রাসায়ানিক ব্যবহার করে তৈরি করা মশার কয়েল প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এসব কয়েলের ধোঁয়া মশা মারছে ঠিকই, কিন্তু তা মানুষের প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। গর্ভপাতের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। পুরুষের শুক্রানু কমে যাচ্ছে। প্রিম্যাচিউরজ বাচ্চার জন্মহার বেড়ে গেছে।

ভেজাল মশার কয়েলের ক্ষতিকর নানা দিক উল্লেখ করে ডা. নওশিন শারমিন পূরবী বলেন, নিম্নমানের মশার কয়েলে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে। আদর্শ কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে না। আইনের তোয়াক্কা না করেই ভেজাল মশার কয়েল বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে। এসব ভেজাল মশার কয়েলের রাসায়নিক নানাভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। যেমন প্রথমে মশার কয়েল ঘরে ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়াটা বাতাসে মিশছে। এরপর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এ ধোঁয়া আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে।

‘ভেজাল মশার কয়েলের থাবায় নারী-পুরুষ কেউ নিরাপদ নয়। গর্ভাবস্থায় মায়েরাও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি নারী ও পুরুষ এর ফলে সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছেন। হাসপাতালে এমন রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। আমাদের লিভার ও কিডনির সমস্যা হচ্ছে এসব অনুমোদনহীন ভেজাল মশার কয়েলের কারণে। তাই আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে’- বলেন ডা. পূরবী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মশার ওষুধের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়ায় হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ক্যানসার, ফুসফুস, কিডনির রোগসহ নানা রোগের বিপদ বাড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মশা তাড়ানোর কয়েলে শূন্য দশমিক ১ থেকে শূন্য দশমিক ৩ মাত্রার ‘অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট’ নামক কীটনাশক ব্যবহার নির্ধারণ করেছে। এ মাত্রার কীটনাশক ব্যবহার হলে মশা পালিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশে প্রস্তুত কিছু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ক্রেতা আকৃষ্ট করতে অতিমাত্রার কীটনাশক ব্যবহার করছে। এতে মশাসহ বিভিন্ন পোকামাকড়, তেলাপোকা এমনকি টিকটিকিও মারা যাচ্ছে। আর নিশ্বাসে বিষাক্ত ধোঁয়া গ্রহণে ধীরে-ধীরে নানাবিধ রোগ বাসা বাঁধছে মানবদেহে।


চিকিৎসকরা বলছেন, সামান্য একটি মশার কয়েলের ধোঁয়ায় থাকা রাসায়নিক, ১৩৭টি সিগারেটে থাকা নিকোটিনের চেয়েও ক্ষতিকর। মশার কয়েলে মাত্রাতিরিক্ত বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার করায় শিশুর বিকাশ কমে যেতে পারে। বড়দের স্মৃতিভ্রম, ঝাঁকুনি, মানসিক দৃঢ়তা, মাথাব্যথার মতো সমস্যা হতে পারে। বিষাক্ত উপাদান শরীরের ইমিউন সিস্টেমের ক্ষতি করে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া থাইরয়েড সমস্যাসহ বিভিন্ন অন্তক্ষরা গ্রন্থির ক্ষতি করে। এ ছাড়া লিভার ও কিডনি বিকল হওয়া, অ্যালার্জিসহ নানাবিধ চর্মরোগ সৃষ্টি করতে পারে।