ফেনীতে পৌরসভার সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ওরিয়েন্টেশন কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারী) সকাল ১১টায় শহরের একটি রেস্টুরেন্টে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান।


ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাপোর্ট টু হেলথ হেলথ এণ্ড নিউট্রিশন টু দি পুওর ইন আরবান বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় দুই দিনের কর্মশালার বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, পৌরসভা জনগণের সেবায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। পৌর জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আপনাদের যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তা কাজে লাগান। ইচ্ছেমত ভবন নির্মাণ, যত্রতত্র আবর্জনা যেন না জমে, একটি মানবিক নাগরিক জীবন নিশ্চিত করতে কাজ করুন।


কর্মশালার উপযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মেয়রকে জানতে হবে কি তার দায়িত্ব, নাগরিক কি কি সুবিধা আদায়ে সরকারের কাছে দাবী তোলা যেতে পারে তা জানতে হবে।


স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইনের ৭৯ নম্বর ধারায় বলা আছে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার পৌরসভার অনুমোদন সাপেক্ষে গড়ে উঠবে। তিনি বলেন, এ আইন না জানলে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনোরকম অনাচার প্রতিরোধ সম্ভব নয়।


পৌর এলাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অপরিকল্পিত নগর গড়ে উঠছে উপজেলা পর্যায়ের পৌর এলাকাতেও। একটি অস্বস্তিকর পরিবেশ দখল করে নিতে পারে আমাদের জীবন। তাই আইন সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে এবং তা মেনে চলতে হবে পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরদের।


বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, বিভিন্ন প্রকল্প হতে পৌরসভায় সরাসরি ফান্ড আসে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় ফান্ড দিয়ে জলাধার রক্ষা, প্রকৃতি রক্ষার কথা বলা হচ্ছে। বাস্তবে বিভিন্ন স্থানে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। জলাধার ছোট হচ্ছে, গাছ কেটে বিরানভূমি হচ্ছে শহর-নগর।


প্রকল্পের উপকারিতা বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের সহযোগিতায় এ প্রকল্প দেশের সিটি ও পৌর পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের নাগরিকের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে জ্ঞান, করণীয় ও সহযোগিতা বিষয়ে বিশদ জ্ঞান লাভের সুযোগ রয়েছে।


অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক পিকেএম এনামুল করিম। তিনি বলেন, পৌর এলাকায় বসবাসকারি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে এ কর্মশালা ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও বলেন, আইন সম্পর্কে সম্যক ধারণা অনেক জনপ্রতিনিধির নেই যা থাকা খুবই জরুরী। তাই সরকার বা মেয়রের স্বপ্রণোদিত চেষ্টায় আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আইন না জানলে আইন ভঙ্গের সম্ভাবনা থাকে।


তিনি বলেন, পৌরসভা মশক নিধন, ভেক্সিনেশন ইত্যাদি প্রোগ্রামগুলো আরও বেশী কার্যকর করতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।


অতিথির বক্তব্যে ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার ক্ষমতা অনেক। তারা কর আরোপের ক্ষমতা রাখেন। তাই পৌর মেয়রসহ জনপ্রতিনিধিদের কর্মপরিধি সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরী। যেকোন সমস্যা দ্রুত সমাধানে বা কোনো রোগের প্রকোপ প্রতিরোধে করণীয় জানতে এ কর্মশালা ভূমিকা রাখবে।


প্রকল্পের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট ও প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর এসএম তোফাজ্জল হোসেনের সভাপতিত্বে ও পদক্ষেপের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোঃ মনিরুজ্জামান সিদ্দিকের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন পরশুরাম পৌরসভা মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল ও সোনাগাজী পৌরসভা মেয়র এড. রফিকুল ইসলাম খোকন।


কর্মশালা প্রসঙ্গে এসএম তোফাজ্জল হোসেন জানান, পৌর জনপ্রতিনিধিদের কি ভূমিকা তা এ কর্মশালার মাধ্যমে আরও বেশী স্পষ্ট করা হবে। তিনি জানান, আজ ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও সোনাগাজী পৌরসভার ৩৯জন জনপ্রতিনিধি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করছেন। আগামীকাল ফেনী, সেনাগাজী ও ছাগলনাইয়া পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা কর্মশালায় অংশগ্রহণ করবেন।