মুজিব বর্ষে ফেনী সদরের শর্শদী ইউনিয়নে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি সম্মান জানিয়ে এ সড়ক নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শর্শদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানে আলম।


ইউপি চেয়ারম্যান জানান, রাস্তাটির দৈর্ঘ্য দেড় কিলোমিটার। এটি ইউনিয়নের রাস্তারখিল রাস্তা হতে শুরু হয়ে নোয়াবাদ হয়ে স্টার লাইন ফিলিং পাম্পের সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিলিত হচ্ছে। তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে এ সড়কের কাজ শুরু করা হয়েছে।


সড়কের নামকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানোর লক্ষ্যে, তার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এ সড়কটির নাম ‘বঙ্গবন্ধু সড়ক’ নামকরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসী এ ব্যাপারে তাদের সমর্থন দিয়েছে।


জানে আলম জানান, ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের রাস্তাখিল, নোয়াবাদ গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াত সমস্যায় ভুগছিলো। মানুষজন অসুস্থ হলে হাসপাতাল ও ডাক্তারের কাছে যেতে দীর্ঘ পথ ঘুরে তাদের শহরে যেতে হত। এছাড়া ফেনী জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত এসব গ্রামের শিক্ষার্থীরা যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়ছিল। এসব সমস্যা সমাধানে এ সড়কটির নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ।


চেয়ারম্যান বলেন, আমি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকাবাসী নতুন রাস্তার জন্য বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী ভাইয়ের সার্বিক সহযোগিতায় সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে।


সড়কটি নির্মিত হলে এ ইউনিয়নের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন দ্রুততর হবে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এর মাধ্যমে ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন উন্নত হবে, তেমনি কৃষিক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা বাড়বে, শিক্ষার প্রসার হবে।


সরেজমিনে রাস্তাটি ঘুরে দেখা যায়, ইতোমধ্যে মাটি ভরাটের মাধ্যমে দেড় কিলোমিটার সড়ক দৃশ্যমান হয়েছে। সড়কটি নির্মাণে এলাকাবাসীও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন। তারা নিজেদের জমির মাটি কেটে রাস্তার ভরাট করার জন্য সহযোগিতা করছেন। রাস্তার মাটি বসলে সম্পূর্ণ সড়কটি পাকা করা হবে বলে জানালেন ইউপি চেয়ারম্যান।


ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য মিল্লাতুর রহমান মিলন জানান, যাতায়াত অসুবিধার কারণে রাস্তারখিল ও নোয়াবাদ গ্রামের মানুষরা দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তিতে ছিলো। আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটি নতুন সড়ক নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলাম। অবশেষে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। ইউনিয়নের হতদরিদ্র তহবিল থেকে ইতোমধ্যে দেড় কিলোমিটার সড়কের কাজ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।


নোয়াবাদ গ্রামের বাসিন্দা ছেমনা আক্তার (৬৫) বলেন, এই এলাকায় বাড়ি করার পর থেকে রাস্তার অভাবে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে কষ্ট হতো। বাড়ির রাস্তা না থাকায় ছেলেমেয়েদের ভালো পরিবারে বিয়ে করানো যেতো না। এখন রাস্তা হওয়ায় আমরা অনেক খুশী। অনেক দিনপর হলেও চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সহযোগিতায় আমরা যাতায়াতের রাস্তা পাচ্ছি। যারা এ রাস্তা করতে ভূমিকা রাখছে আমরা সবার জন্য দোয়া করি, আল্লাহ সবার ভালো করুক।

এ গ্রামের আরেক বাসিন্দা মোঃ বেলাল জানান, বঙ্গবন্ধু সড়ক নামে রাস্তাটি হওয়ায় আমাদের যাতায়াত অনেক সহজ হবে। এর ফলে এখন অনেক অল্প সময়ে শহরে যাতায়াত করতে পারব।


রাস্তারখিল গ্রামের বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন (৫৯) বলেন, যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় দীর্ঘদিন আমরা জলাবদ্ধতাসহ অনেক অসুবিধায় জীবন যাপন করতে হচ্ছিল। এ রাস্তাটি করার জন্য দীর্ঘদিন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে দাবী করে আসছিলাম। অবশেষে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় আমরা দুই গ্রামের মানুষ যাতায়াতের রাস্তা পাচ্ছি। পূর্বে নোয়াবাদ ও রাস্তারখিলের মানুষ ফতেহপুর এবং শর্শদী ঘুরে শহরে যেতে হত। এখন বঙ্গবন্ধু সড়ক হওয়াতে আমরা অল্প সময়ে সরাসরি ঢাকা-চট্টগ্রামসহ যেকোন দিকে সহজে যাতায়াত করতে পারব।


৭নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার নুরুল আমিন (৭২) বলেন, শর্শদী ইউনিয়ন ফেনী শহরের অতি সন্নিকটে হওয়া সত্ত্বেও পরিকল্পিত উন্নয়নের অভাবে এখানকার নোয়াবাদ ও রাস্তারখিল বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়ে আছে। জলাবদ্ধতা, যাতায়াতের অসুবিধা, কৃষিকাজে অসুবিধাসহ নানা ধরনের সমস্যা বিরাজ করছিল। বঙ্গবন্ধু সড়কটি নির্মিত হলে এখানকার স্থানীয়দের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটবে। রাস্তা হওয়া জায়গা-জমির দাম বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসা বাণিজ্যের নতুন পথ সৃষ্টি হবে। আমি আশা করি অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে এ সড়কের কাজ শেষ করতে পারলে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হবে।