আগামীকাল সোমবার থেকে সারাদেশের ন্যায় ফেনীতেও শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। পরীক্ষা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা অফিস। সোমবার প্রথম দিনের পরীক্ষায় এসএসসিতে বাংলা ও দাখিলে কোরআন মাজীদের পরীক্ষায় অনুষ্ঠিত হবে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সলিম উল্লাহ জানান, ২০২০ সালের এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষায় জেলা ৬টি উপজেলার ৩৫টি কেন্দ্রে ২৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৯ হাজার ৩৬২ শিক্ষার্থী অংশ নেবে। এর মধ্যে এসএসসিতে ১৯টি কেন্দ্রে ১৭৭টি বিদ্যালয় থেকে ১৩ হাজার ৭৮১ শিক্ষার্থী, দাখিলে ৯টি কেন্দ্রে ১০২টি মাদরাসার ৪ হাজার ৬শ ৬৬ শিক্ষার্থী, এসএসসি ভোকেশনালে ৬টি কেন্দ্রে ৮টি বিদ্যালয়ের ৮শ ৮৩ শিক্ষার্থী এবং দাখিল ভোকেশনালের ১টি কেন্দ্রে ৩২ পরীক্ষার্থী রয়েছে।


তিনি বলেন, বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী এসএসসি, দাখিল এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো শিক্ষার্থী দেরি করে কেন্দ্রে আসলে রেজিস্ট্রারের নাম, ক্রমিক নং ও বিলম্বের কারণ উল্লেখ করতে হবে। দেরি আসা পরীক্ষার্থীদের তালিকা অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাবেন কেন্দ্র সচিব।


জেলা প্রশাসনের সাধারণ শিক্ষা শাখা সূত্রে জানা যায়, এসএসসিতে ফেনী সদরে ৭টি পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে বিজ্ঞান বিভাগ হতে ১ হাজার ৭শ ৮৮, মানবিক বিভাগ হতে ১ হাজার ৪শ ৮৯ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ হতে ২ হাজার ৮শ ৮১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। এর মধ্যে ফেনী সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ হাজার ৫শ ৯৭ শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১ হাজার ৭শ ৬২ শিক্ষার্থী, ফেনী গালর্স ক্যাডেট কলেজ কেন্দ্রে ৫৫ শিক্ষার্থী, ফাজিলপুর ডব্লিউবি কাদরী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫শ ৬৯ শিক্ষার্থী, শরীষাদী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫শ ১৪ শিক্ষার্থী, ধলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২শ ৫২ শিক্ষার্থী, বালিগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪শ ৯ শিক্ষার্থী অংশ নেবে।

পরশুরাম সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১টি কেন্দ্রে বিজ্ঞান বিভাগ হতে ১শ ২৮, মানবিক বিভাগ হতে ২৪৯ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ হতে ৪শ ৪৮জন মোট ৮শ ২৫ পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।

ফুলগাজীতে ২টি কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ হতে ৩শ ৫২জন, মানবিক হতে ৫শ ৫৯ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ হতে ৭শ ৯১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। ফুলগাজী সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১ হাজার ৭৬ শিক্ষার্থী, আলী আজ্জম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬শ ২৬ শিক্ষার্থী, ছাগলনাইয়া সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৭শ ৯৭ শিক্ষার্থী, সোনাগাজী মোহাম্মদ সাবের সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪শ ২১ শিক্ষার্থী, বক্তারমুন্সি মোয়াজ্জেম হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬শ ২১ শিক্ষার্থী, ভোর বাজার এডভোকেট বেলায়েত হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩শ ২৪ শিক্ষার্থী, সোনাগাজী বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ২শ ৪৩ শিক্ষার্থী, দাগনভূঞা আতাতুর্ক সরকারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭শ ৩৩ শিক্ষার্থী, সুজাতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬শ ২১ শিক্ষার্থী, সিলোনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪শ ৩২ শিক্ষার্থী ও দাগনভূঞা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯শ ৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছে।

এসএসসি ভোকেশনালে ফেনী টেকনিকেল স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে ৩শ ৬৩ শিক্ষার্থী, ফুলগাজী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৮ শিক্ষার্থী, পরশুরাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫৭ শিক্ষার্থী, ফাজিলপুর ডব্লিউবি কাদরী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫১ শিক্ষার্থী, ছাগলনাইয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১শ ৫০ শিক্ষার্থী ও সোনাগাজীর মোহাম্মদ সাবের আহাম্মদ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ২শ ১৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে।

দাখিলে ফেনী আলীয়া কামিল মাদরাসা কেন্দ্রে ৯শ ৫০ শিক্ষার্থী, আরএম হাট কে উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪শ ১৯ শিক্ষার্থী, ছাগলনাইয়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে ৯শ ৩৮ শিক্ষার্থী, পরশুরাম ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে ৪শ ২৬ শিক্ষার্থী, দাগনভূয়া আজিজিয়া ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে ৫শ ৬১ শিক্ষার্থী, কোরাইশমুন্সি আলীম মাদরাসা কেন্দ্রে ৩শ ৭৬ শিক্ষার্থী, মুন্সিরহাট ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে ২শ ৮৮ শিক্ষার্থী, বক্তারমুন্সি ফাজিল ডিগ্রী মাদরাসা কেন্দ্রে ৩শ ৬৩ শিক্ষার্থী ও গোবিন্দপুর ছিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে ৩শ ৪৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। এছাড়াও দাখিল ভোকেশনালে ফুলগাজীর দক্ষিণ শ্রীপুর ইসকান্দারিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা ৩২ শিক্ষার্থী অংশ নেবে।

পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো: ওয়াহিদুজজামান জানান, সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহনের যাবতীয় প্রস্তুুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পরীক্ষার দিনে কেন্দ্রের আশেপাশে ১৪৪ ধারা জারিসহ পরীক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত আইনশৃংখলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। জেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ৮টি ভিজিলেন্স টীম, প্রত্যেক কেন্দ্রে ১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম ও প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য ১জন করে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কেউ পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন বা অননুমোদিত ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। কেন্দ্র সচিব ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। অননুমোদিত মোবাইল ফোন বা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে।


এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষার প্রত্যেক কেন্দ্রে একজন নির্বাহী কর্মকর্তা বা ম্যাজিস্ট্রেট (ট্যাগ অফিসার) নিয়োগ দিতে হবে। তারা ট্রেজারি বা থানা থেকে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা তার প্রতিনিধিসহ প্রশ্নগ্রহণ করে পুলিশ প্রহরায় পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। নির্বাহী কর্মকর্তা বা ম্যাজিস্ট্রেটের (ট্যাগ অফিসার) উপস্থিতি ছাড়া প্রশ্ন বের করা যাবে না বলেও পরিপত্রে বলা হয়।


ট্রেজারী বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে পরীক্ষা কেন্দ্র এমসিকিউ, রচনামূলক বা সৃজনশীল প্রশ্নের সব সেট প্রশ্নই নিতে হবে। সেট কোড পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে জানিয়ে দেয়া হবে। সে অনুযায়ী নির্ধরিত সেটকোডে পরীক্ষা নিতে হবে। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ট্যাগ অফিসার) এবং পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এবং স্বাক্ষর দিয়ে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলতে হবে।


এছাড়া এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষার সময় ও এর আগে বা পরে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজের সময় কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ছাড়া অন্যদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসময় পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশকারী অননুমোদিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


কোনো কারণে পরীক্ষা দেরিতে শুরু করতে হলে যত মিনিট পরে পরীক্ষা শুরু হবে পরীক্ষার্থীদের সেসময় থেকে যথারীতি প্রশ্নপত্রে উল্লেখিত নির্ধারিত সময় দিতে হবে।